‘বৈচিত্র্যে মধ্যে ঐক্য’-র এই দেশে আছে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা। ফলত ভাষা এবং স্থাপত্যে ভারতের জুড়ি মেলা ভার। ভারতের আনাচে কানাচে তাই ছড়িয়ে আছে হাজারো মন্দির, মসজিদ, চার্চ। যেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ধর্মীয় স্থান এবং স্থাপত্যের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে হাজারো বছরের ইতিহাস। তেমনই এক মন্দির স্থাপত্য বর্ধমানের ‘বুড়ো শিব’-এর ইতিকথা সম্পর্কে আজ জানা যাক।
পুরাণ মতে তেনার না আছে আদি না আছে অন্ত। তেনার পুজো চলে আসছে হিন্দু ধর্ম উৎপত্তির গোড়ার দিক থেকে। ভারতবর্ষের প্রত্যেকপ্রান্তে রয়েছে তাঁর অর্থাৎ মহাদেবের মূর্তি। কিছু মূর্তির বয়েস শুনলে অবাক হবেন সকলেই। তেমনই এক মূর্তি রয়েছে বর্ধমানের আলমগঞ্জে মন্দিরে। এটি যদিও পরিচিত ‘বুড়ো শিব’ বা বর্ধমানেশ্বর মন্দির নামেই। কিন্তু লোকমুখে এটি ‘মোটা শিব’ মন্দির নামেও প্রচলিত। এই শিবলিঙ্গের বয়েস আনুমানিক প্রায় ১৬০০ থেকে ১৭০০ বছর। শুধু তাই নয় মনে করা হয় এই মন্দিরের শিবলিঙ্গটি আকারে রাজ্যের সবথেকে বড়ো। এই মন্দিরের আনাচে কানাচে জড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস। ইতিহাসবিদগণ এও বলেন যে এই মন্দিরে খোদ কনিষ্ক নিয়মিত শিবলিঙ্গের পুজো করতেন। ১৯৭২ সালে এই অঞ্চলে পুকুর কাটার সময় মাটি খুঁড়তে গিয়ে গাঁইতির কোপ পড়ে একটি কালো পাথরের ওপর। তারপরই শ্রমিকরা মাটি খুঁড়ে খুঁজে পান একটি ৬ ফুট লম্বা ১৩ টনেরও বেশি ওজনের গৌরীপট্ট সহ এই বিশাল শিবলিঙ্গটি। তারপরেই ক্রেনে করে শিবলিঙ্গটি তুলে পাশেই স্থাপন করা হয়। এই সংলগ্ন এলাকায় তৈরি করা হয় দুধপুকুর। উৎসবের দিনে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে মন্দিরে।
শিবলিঙ্গের বয়েস নিয়ে যদিও কোনো দ্বিধা নেই কিন্তু এটাও মনে করা হয় যে ১৬০০-১৭০০ বছরের প্রাচীন শিবলিঙ্গের পুজো করতেন কনিষ্ক। কিন্তু পরে এই লিঙ্গটি দামোদরে ভেসে আসে। তবে সেটি এতোই ভারী, তাহলে কী করেই বা দামোদর নদে ভেসে এসেছে সেটি নিয়ে অনেক দ্বন্দ্ব এবং দ্বিমত রয়েছে। কিন্তু এসব তর্কের বাইরে এটা মানতেই হবে যে এই শিবলিঙ্গটি পশ্চিমবঙ্গের অনেক ঐতিহ্য বহন করছে। যাঁর আদি নেই যাঁর অন্ত নেই তাঁর মূর্তি জুড়ে এমন অনেক ইতিহাস তো থাকবেই!
Discussion about this post