শেষবার বন্ধ হয়েছিল সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্ল্যাক আউটের সময়। তারপর আবার এ বছর। করোনার প্রকোপ পড়ল ভগবানের পূজার উপরেও। তারই প্রভাবে বন্ধ হয়ে গেল কানাশোলের সুপ্রাচীন গাজনের মেলা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর ব্লকের আনন্দপুর থানার অন্তর্গত এই কানাশোল গ্রাম। আর পাঁচটা কৃষিপ্রধান বর্ধিঞ্চু গ্রামের মতোই সাধারণ ছোট্ট একটি গ্রাম এটি। কিন্তু এই গ্রামটির একটি বিশেষ পরিচিতি রয়েছে, যা শুধু মেদিনীপুর নয় বরং সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ এই গ্রামেই অবস্থিত বাবা ঝাড়েশ্বরের মন্দির। হিন্দু ধর্মের প্রাচীনতম দেব মহাদেব এখানে ঝাড়েশ্বর রূপে পূজিত হোন। প্রাচীন রাীতিতে নির্মিত এই মন্দিরের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে বাবা ঝাড়েশ্বরের মাহাত্ম্যের কথা।
প্রতি বছর চৈত্র মাসে গাজন উপলক্ষ্যে প্রায় একমাস ব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয় বাবা ঝাড়েশ্বরের মন্দির চত্বরে। কানাশোল গ্রামের সেই গাজনের মেলায় দশ হাজারের বেশি ভক্ত সহ প্রায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। কিন্তু করোনার দাপটে এবছর মেলা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূজার আয়োজকরা। ধর্মীয় পঞ্জিকা অনুযায়ী হলে চড়ক সংক্রান্তির পূজা হলেও, হচ্ছে না কোনও মেলা। প্রশাসনের পরামর্শ মেনে বাবার চড়ক সংক্রান্ত কোনো অনুষ্ঠানই হবে না তাই থাকবে না কোনও ভক্তও।
এই মন্দিরের সেবায়েত পুরোহিত সুনীল মিশ্রের কথায়, তাঁর পঁচাত্তর বছরের জীবনে মেলা বন্ধের মত কোনও অভিজ্ঞতা নেই। তবে তিনি পূর্বপুরুষদের থেকে শুনেছেন ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার ব্ল্যাকআউট ঘোষণা করে। তারই ফলস্বরূপ মন্দিরের সমস্ত পূজা সংক্রান্ত কার্যক্রম বাতিল করে দেওয়া হয়। তার পর এই ২০২০ সালে, প্রশাসনের পরামর্শ মেনে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখতে এই বছরের গাজন উৎসব করা সম্ভব হচ্ছে না। সুনীল বাবু আরও জানান, বাবার পূজা তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং বাবার কাছে সংসারের সকলের মঙ্গলকামনা ও করোনা আতঙ্কের থেকে মুক্তির প্রার্থনা করছেন। করোনার দাপটে ভক্তদের আনাগোনা তাই বন্ধ হলেও, বাবার পূজা বন্ধ হতে দিতে নারাজ তাঁর সেবায়েতরা। তাই পূজা চলছে নিয়মমাফিকই। শুধু এবছরের মত বন্ধ রইল শতাব্দী প্রাচীন সেই ঐতিহ্যময় গাজনের মেলা। শেষমেশ করোনার দাপটের কাছে হার মানতে হল বাবার অগণিত ভক্তগণকেও।
প্রতিবেদক – তন্ময় সিনহা
Discussion about this post