তন্ত্র অনুসারে কালী দশমহাবিদ্যার প্রথম দেবী। কেরালা ব্যতীত সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ভারতীয় উপমহাদেশে কালীকে ভগবান শিবের স্ত্রী পার্বতীর রূপ হিসাবে বিশ্বাস করা হয়। কেরালার লোকবিশ্বাস অনুসারে ভগবান শিবের তৃতীয় নয়ন থেকে রাক্ষসদের ধ্বংস করার জন্য তিনি আবির্ভূতা হন, তাই কেরালায় তাঁকে ভৌরবকন্যা মহাকালী বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে রয়েছে কালী কথার নানা ইতিহাস। তেমনই পুরা কথা ও কিছুটা লৌকিকতার মিশ্রণ বাগনানের খালোড় কালী মন্দির।
বলা হয়, বাগনান একসময় মোঘল আমলে বিখ্যাত জমিদার বর্ধমানের মহারাজা কন্দর্প নারায়ণের জমিদারীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজা দেবী কালীর স্বপ্নাদেশে দামোদরের তীরে কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দির ইট নির্মিত। মন্দিরের ভিতরে দক্ষিণাকালী ও নীচে শয়নরত শিবের নিমকাঠের মূর্তি রয়েছে। ভাদ্র মাসের অমাবস্যায় হয় তালকালী ও পৌষ মাসের অমাবস্যায় হয় মূলাকালী রূপে দেবীর পুজো। মন্দিরের ভেতরে রয়েছে পাল যুগের কষ্টিপাথরের বিষ্ণুমূর্তি ও ছয়টি পাথরের কূর্ম মূর্তি।
মন্দিরের সামনে নাটমন্ডপের দুপাশে দুটো আটচালা শিব মন্দির রয়েছে। পূর্বমুখী মন্দিরে বাণলিঙ্গ ও পশ্চিমমুখো মন্দিরে মৃত্যুঞ্জয় শিব প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরের পশ্চিমে রাস্তার অন্যদিকে রয়েছে ধর্ম মন্দির। পুরাণে দেবী কালীর একাধিক রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন দক্ষিণা কালী, শ্মশান কালী, ভদ্রকালী, রক্ষাকালী ,গ্রহ কালী, চামুণ্ডা, ছিন্নমস্তা প্রভৃতি। মহাকাল সংহিতা অনুসারে মা কালীর আবার নব রূপের পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন কাল কালী, কঙ্কাল কালী, চিকা কালী এমন সব রূপের রূপের পরিচয়ও পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন মন্দিরে ব্রহ্মময়ী , আনন্দময়ী, ভবতারিণী, আনন্দময়ী ইত্যাদি নামেও মা কালীর পূজা বা উপাসনা করতে দেখা যায়। মাতৃ শক্তির আরাধনায় আজও ঘরোয়া রীতিকেই বজায় রেখেছে বাগনানের খালোড় কালী মন্দির।
Discussion about this post