“রাষ্ট্র তুমি যতবার নামিয়ে আনবে হুঙ্কার, ততবার আমরা এভাবেই গুড়িয়ে দেব তোমার অহঙ্কার।” আজ্ঞে হ্যাঁ সম্প্রতি সারা ভারত বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সংস্থার তরফে আয়োজন করা হয়েছিল ‘যুক্তি চিন্তন উৎসব’। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শ্যামনগর শাখার রবীন্দ্র ভবনে এটি অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদিতা, ইতিহাস-চেতনাই ছিল অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু। মধ্যযুগীয় কূপমন্ডকতা, অ-বিজ্ঞান ও ধর্মীয় পশ্চাদপদতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে আধুনিকতার ও প্রগতিশীলতার পক্ষে সওয়াল করাই ছিল এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। নতুন ধরনের এই উৎসব কতগুলো হতাশা-চিহ্নের দিকে চোখ রেখেই আয়োজন করা হয়েছিল।
এই অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্পর্কে শ্যামনগর শাখার সম্পাদক রানা দে আমাদের জানিয়েছেন; “আমরা দেখছি, বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদিতা, ইতিহাস-চেতনা – যা যা আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতার লক্ষণ, তা যেন ভারত রাষ্ট্রের শরীর থেকে মুছে ফেলার জোরালো চেষ্টা চলছে। ভারতীয় উপমহাদেশে বিজ্ঞান-চেতনার দীনতা বরাবরই ছিল। তবু সংবিধান-কথিত ‘বৈজ্ঞানিক মেজাজ’ বা ‘Scientific Temper’ তৈরির যে কথা বলা হত এতকাল, যা ভারতকে তার প্রতিবেশী দেশ সমূহ তথা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে অনন্য করে রেখেছিল, তার ফলে ভারত রাষ্ট্র সরাসরি অ-বিজ্ঞান ও ধর্মীয় পশ্চাদপদতার পক্ষ নিত না। কিন্তু বর্তমানে সেই বৈজ্ঞানিক মেজাজ তৈরির সম্পূর্ণ বিপরীতেই রাষ্ট্রের চলন আমরা লক্ষ করছি। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে স্পষ্টতই বিজ্ঞান, যুক্তিবোধ, ইতিহাস-চেতনার পক্ষ নিয়েই আমাদের এই আয়োজন।”
উৎসবের অনুষ্ঠান সমূহের মধ্যে ছিল; বিজ্ঞান কর্মী সম্মেলন. পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিজ্ঞান সংগঠন ও বিজ্ঞান কর্মীরা ওইদিন যোগ দিয়েছিলেন এই সম্মেলনে। বিবর্তনবাদ, জিনতত্ত্ব ও ভারতীয়ত্ব – যেখানে বিবর্তনবাদ আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যমত স্তম্ভ, তাহলে জাত-ধর্মের নিরিখে কাউকে কি খাঁটি ভারতীয় বলা চলে? ভারতীয়ত্বের যে নির্মাণ চলছে আজকের ক্ষমতাসীন শিবির থেকে, তার পেছনেই বা বৈজ্ঞানিক সত্যতা কতটুকু? এই বিষয় আলোচনায় ছিলেন ড. রুবিয়া মন্ডল। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের গবেষক। মন্দির মসজিদ দ্বন্দ্ব: ইতিহাস থেকে সমাজ বিজ্ঞান – আজকাল নানান পৌরাণিক ঘটনা ও চরিত্রকে যেভাবে ইতিহাসের মতো করে পরিবেশন করা হচ্ছে, তা কতটা ভ্রান্ত, সেই বিষয় নিয়েই আলোচনায় ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক অশোক মুখোপাধ্যায় এবং সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শুভাশিস নিবিড়। তথ্যচিত্র: Reason/ বিবেক – ২০১৮ সালে আনন্দ পট্টবর্ধন পরিচালিত এই তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়েছে দাভোলকর, পানসারে, কলবর্গী, গৌরী লঙ্কেশদের মতো বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কর্মীদের হত্যার প্রেক্ষাপটে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান – ছিল প্রণব ঘোষের স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি এবং মানবতার গান। ভারতীয় জ্ঞান পরম্পরা – উৎসব প্রাঙ্গণে একটি বিজ্ঞান প্রদর্শনীর আয়োজনও করা হয়েছিল। পুস্তক সম্ভার – যুক্তি-চিন্তনের অন্যতম সেরা হাতিয়ার যেহেতু বই, তাই অনুষ্ঠানে বুক স্টলের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।
Discussion about this post