সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের হাথরাসের নৃশংস ঘটনায় স্তম্ভিত সারা দেশ। গত ১৪ সেপ্টেম্বর হাথরাসের এক বাজরা ক্ষেতে মায়ের সঙ্গে চাষের কাজে গিয়েছিলেন মণীষা বাল্মিকী। চারজন উচ্চবর্ণের পুরুষ তাকে ধর্ষণ এবং শেষে অত্যাচার করে বলে অভিযোগ ওঠে। গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান তার বাড়ির লোক। গত ২৯ সেপ্টেম্বর হাসপাতালেই মারা যায় মেয়েটি। তারপর থেকেই তোলপাড় রাষ্ট্র। ধর্ষকদের শাস্তির আর্জি জানিয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন মানুষ। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বর্তমান তদন্তে সন্তুষ্ট নন তারা। চাইছেন আরও গভীর, নিরপেক্ষ তদন্ত। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক প্রকৃত দোষীদের৷ এই দাবীতে সোচ্চার হন বহু মানুষ। ঠিক সেরকমই এক মঞ্চ ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ, বহু ছাত্র-যুবদের নিয়ে মণীষার বিচারে পথে নামলেন।
গত ৩ অক্টোবর ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ এবং ছাত্রছাত্রীদের মিলিত উদ্যোগে হাথরাস ধর্ষণ কান্ড ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে একটি মিছিল বের করা হয়। ঝাড়গ্রামের রাজ কলেজ মোড় থেকে পাঁচমাথার মোড় পর্যন্ত চলে এই মিছিল। মিছিলের মূল দাবী, গোটা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং হত্যাকারীদের শাস্তি। তার সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনেরও ভূমিকা নিয়ে সোচ্চার হন তাঁরা। তবে দাবীতে এ কথা বেশ স্পষ্ট যে, তারা এনকাউন্টার চাইছেন না। তাদের মতে, মৃত্যুদণ্ড বা অন্য কোনও শাস্তি দিয়ে সমাজ থেকে ধর্ষণ পুরোপুরি নির্মূল করা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। তবে তাদের দাবীতে ঠিক কী বলতে চাইছেন ঝাড়গ্রামের নাগরিকবৃন্দ?
পরিসংখ্যান বলছে ২০১৪-১৮ পর্যন্ত ভারতে প্রায় ১.৭৫ লক্ষ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কাজেই হাথরাসের ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা একদমই নয়। এর পিছনে একটাই কারণ, সামাজিক পিতৃতান্ত্রিকতা। পরিবারের আচার ব্যবহারের কারণেই ছোটবেলা থেকেই একটি মেয়ে বা ছেলে এই পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা নিয়ে বড়ো হয় আর এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সমূল বিনাশই ধর্ষণ বা মহিলার ওপর অত্যাচার রোধের একমাত্র উপায়। তবে বর্তমানে পুলিশ-প্রশাসন যখন অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করেন, উচ্চবর্গের উৎপীড়নের সঙ্গে যখন ধর্ষণ হয়ে যায় সমার্থক তখন সমাজ এবং রাষ্ট্রের উৎপীড়নের হাতিয়ার হয়ে যায় পিতৃতন্ত্র। এই পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই গর্জে উঠেছেন ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ। এছাড়াও উচ্চ-নীচ এই বর্ণভেদের মতো কুৎসিত আচরণের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং মনুবাদের বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলেছেন তাঁরা। ছাত্রীদের কথায় এও ধরা পড়ে, সমাজের গোড়া থেকেই কীভাবে জেগে ওঠে ছেলেদের আধিপত্য।
মিছিল শেষে পথসভায় বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী অঙ্কুর মন্ডল, সমাজকর্মী তোতা সাঁতরা। ‘এপিডিআর’ এবং ‘শ্রমজীবী নারীমঞ্চ’-এর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তিতাস এবং স্কুল পড়ুয়া সোমাভা। গান এবং আবৃত্তি করেন সুতপা ও ঋতি। ঝাড়গ্রাম পাঁচ মাথার মোড়ে মানববন্ধন করে ধর্ষণমুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকার নিয়েই শনিবারের মিছিল এবং পথসভা শেষ হয়।
Discussion about this post