বাংলার স্থাপত্য, ভাস্কর্য, সংস্কৃতি এসব নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এসবকে ঘিরেই শক্তিশালী হয়েছে বাংলার ঐতিহ্যের বুনিয়াদ। তবে শুধুই ইঁট পাথরের শৌখিনতা নয় খড়কুটোর তৈরী কিছু সাধারণ জায়গাও বাঙালির কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে সমাদর পায়। তেমনই এক জায়গা হল ছোট্ট গ্রাম, জয়রামবাটী। মা সারদার জন্মভিটের সেই আধ্যাত্মিক ভূমি।
এখনকার গ্রামে এসেছে শহরের ছোঁয়া। মাটির বাড়ির সংখ্যাও আজ হাতে গোনা। দোতলা একতালা পাকাবাড়িতে গ্রামগঞ্জও আজ সেজে উঠেছে। কিন্তু এই নগরায়নের হাওয়াতেও বদলায়নি মা সারদার সেই বসতভিটেটি। আজও পল্লীর ছাপ লেগে সেই বাড়ি জুড়ে। আসলে মায়ের উত্তরসূরি এক বৃদ্ধা এখনও ওই ভিটেতে আদি বাংলার সেই নিখাদ গ্রাম্যজীবনকে আঁকড়েই বাঁচেন। প্রত্যেকদিন সকালে গোবরজল নিকিয়ে ঘর পরিষ্কার করেন। থান শাড়ি আটপৌরে করে জড়িয়ে গুল দিয়ে দাঁত মাজতে বেরোন। ধুলো জড়ানো খালি পায়ে হেঁটে বেড়ান গ্রামের হাটে মাঠে ঘাটে। কখনো মাটির দাওয়ায় নিশ্চিন্তে বসে থাকেন। কখনোবা গোয়ালের গরুদের মুখে নিজে হাতে খাওয়ার ধরান। বাড়িতে কেউ খেতে বসলে তার পাশে হাসি মুখে পাখা নাড়েন। মা সারদা ঠিক যেমন এক অনাড়ম্বর যাপনে অভ্যস্থ ছিলেন এই বৃদ্ধাও তেমনভাবেই জীবন কাটান।
এই ভিটেবাড়ি বাঙালির কাছে এক প্রাণের জায়গাই বলা যায়। এখানের প্রতি কোনায় আজও মা সারদার স্মৃতি লেগে রয়েছে। ঠিক যে স্থানে মায়ের জন্ম সেখানে আজ সুন্দর মন্দিরও তৈরী হয়েছে। মায়ের এই পুরোনো বাড়িটি বেলুড় মঠের তত্ত্বাবধানে গেলেও যথার্থ রক্ষণাবেক্ষণ করেন এই বৃদ্ধা। বৃদ্ধার পরবর্তীরা কতটা এই ভিটের খেয়াল রাখবেন তা জানা নেই। কিন্তু এই বৃদ্ধার ভালোবাসা ও সাদামাটা যাপনে মায়ের উপস্থিতি কিছুটা হলেও অনুভব করেন দর্শণার্থীরা।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – হ্যালি গোস্বামী
Discussion about this post