বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতীর বসন্ত উৎসবের কথা যতটুকু শুনেছি তাতে বসন্ত উৎসবে হাজির হওয়াটা আমার কাছে স্বপ্নের মতোই মনে হত। সৌভাগ্যক্রমে সেই স্বপ্ন পূর্ণতা পায় ভারতের বারাসাতের বাসিন্দা পরম শ্রদ্ধেয় দাদা ও দিদি অমরেশ ভট্টাচার্য এবং শর্মিষ্ঠা ভট্টাচার্যের মাধ্যমে। ২০১৮ সালে দোল পূর্ণিমার আগের দিন বোলপুরে উপস্থিত হতেই দেখি দূরদূরান্ত থেকে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ হাজির হয়েছে শান্তিনিকেতনে। দেখলাম শান্তিনিকেতনর সোনাঝুরি খোয়াই, কোপাই নদীর আশপাশ সেজে উঠেছে পলাশ ফুলে। কোথাও লাল আবার কোথাও হলুদ। মনে হয়, শান্তিনিকেতনে প্রকৃতি যেন আপন খেয়ালে ছবি এঁকেছে।
২০১৯ সালে নতুন চাকুরীতে যোগদান করার পরে আর বসন্ত উৎসবে যাওয়া হয়নি। তারপর ২০২০ সালে মহামারী শুরু হওয়ার পর প্রায় ২ বছর ভারতে যাওয়া হয়নি। বসন্ত এলেই মিস করতাম শান্তিনিকেতন। মজার বিষয় হলো শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতীর সেই স্বাদ পেলাম বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঘনসবুজ গাছপালায় আবৃত বন্ধুর ও সমতল ভূমিতে স্থাপিত বাংলাদেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর।এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ অবকাঠামো লাল ইটের তাই এর সৌন্দর্য একটু আলাদা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও বিখ্যাত। জাহাঙ্গীরনগর নামটি শুনলেই মানুষের মনে শান্তির সঞ্চার ঘটে।সারি সারি গাছপালার সম্মিলিত হাওয়া মানুষের দীর্ঘ ক্লান্তিময়তাকে দূর করে মনের মধ্যে একপ্রকার সজীবতা দান করে। জাহাঙ্গীরনগরের ছোট বড় লেকগুলোর মধ্যে ফুটে উঠেছে কল্পনার লালপদ্ম। পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে ভড়ে উঠেছে চারপাশ। শিল্পীরা রঙ তুলি হাতে নিয়ে বসে পড়েছে মনের মাধুরী মিশিয়ে স্বপ্নের জাহাঙ্গীরনগরকে আঁকবে বলে। পিচঢালা পথে আলপনার ছড়াছড়ি মুগ্ধ করে পথের পথিককে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম আকর্ষণ নব্বইয়ের দশকের কিছু পুরনো বাস এছাড়া কলকাতার রাজপথের বিলুপ্ত ডবলডেকার বাস গুলো এখানের আসলেই দেখা মিলবে।
পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বাড়াতে ২০০১ সাল থেকে নিয়মিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখি মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এই ক্যাম্পাসে ৯০ প্রজাতির প্রজাপতি দেখতে পাওয়া যায়। এজন্য প্রতি বছর সচেতনতামূলক প্রজাপতি মেলা হয়ে আসছে।
Discussion about this post