ইতালির শ্রমিকশ্রেণী যেন আন্তর্জাতিকতাবাদকে জীবনবোধ হিসেবে গ্রহণ করছেন। তাঁরা এই লড়াইকে দেখছেন “সারা বিশ্বের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের” সংগ্রামের অংশ হিসেবে। তাঁদের আন্দোলন অর্থনৈতিক দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। চলতি মাসের শুরুতেই ইতালিতে বন্দর শ্রমিকরা জেনোয়া ও অন্যান্য বন্দরে অনির্দিষ্টকালের মতো কাজ বন্ধ করেছিলেন। কারণ? যাতে কোনো যুদ্ধাস্ত্র ইজরায়েলে পাঠানো না যায়। তাঁরা সরাসরি বলেছেন, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদকে ঠেকাতে দেশ সীমানার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার বাইরেও লড়াই প্রয়োজন।
শ্রমিকশ্রেণীর এই আন্দোলনের সংহত রূপ হিসেবে ২২ সেপ্টেম্বরের জন বিক্ষোভে অচল হল সারা মিলান শহর। দাবি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে হবে। বিক্ষোভে অংশ নেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। শুরুতে শান্তিপূর্ণ থাকা এই ‘গাজা সংহতি আন্দোলন’ পরে সহিংস রূপ নেয়। অন্তত ৬০ জন পুলিশ আহত হন এবং প্রায় ১০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। “জেনারেল ধর্মঘট ফর গাজা” নামে এই ধর্মঘটে ৭৫টিরও বেশি বন্দর, রাস্তা, শিক্ষা ও পরিবহনক্ষেত্র অচল হয়। রাভেন্না বন্দরে দুইটি অস্ত্রবাহী লড়িকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি, কারণ সন্দেহ করা হয়েছিল সেগুলি ইজরায়েলের। এই কর্মসূচিগুলি দেখিয়ে দিল যে, শ্রমিকশক্তি আন্তর্জাতিক রাজনীতির মঞ্চেও সরলভাবে উপস্থিত হতে পারে। শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্র কেন্দ্রিক নয়, বিশ্বব্যাপী ন্যায় ও সংঘর্ষের ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক হতে পারে।
গাজার পক্ষে বিশ্বজুড়ে আরো নানা দেশে মিছিল ও আন্দোলন হয়েছে। নেদারল্যান্ডসে “Red Line Demonstrations” নামে বিক্ষোভ হয়, আর বাংলাদেশে ঢাকায় বিশাল “March for Gaza” অনুষ্ঠিত হয়। মরক্কোতে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে নিয়মিত বিক্ষোভ চলছে, আর ইউরোপের প্যারিস, বার্লিন, ভিয়েনা, রোম ও মাদ্রিদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামে। ভারতেও দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদে বিক্ষোভ হয়। পাশাপাশি তুরস্কে ব্যাপক জনসমাগম হয়, লেবাননের বেইরুতে ও জর্ডানের আমানেও গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
ইতালির সাধারণ মানুষের এই শ্লোগানে বৈশ্বিক বন্ধন তৈরি করেছেন কলোম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভ পেট্রো (Gustavo Petro) ।তিনি জাতিসংঘে বলেছেন, “যেসব দেশ গণহত্যাকে মেনে নিতে পারে না তারা মিলিতভাবে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠন করুক।” স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলতে থাকলে তাদের আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে অংশগ্রহণ বন্ধ করা উচিত। হলিউড ও আন্তর্জাতিক বহু তারকা গাজার পক্ষে কথা বলেছেন। সম্প্রতি এমি অ্যাওয়ার্ডসে অভিনেতা হাভিয়ের বার্ডেম প্রকাশ্যে গাজার হত্যাযজ্ঞকে “গণহত্যা” বলেছেন। অসংখ্য সংগীতশিল্পী, অভিনেতা “টুগেদার ফর প্যালেস্টাইন” উদ্যোগে একসাথে হয়ে গাজায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধের আহ্বান জানান।
Discussion about this post