বাইরে বইছে তাপপ্রবাহ। মাঝে মাঝে বৃষ্টির দেখা পেলেও স্বস্তি পাচ্ছে না কেউই। টানা কয়েকদিনের তীব্র গরমের দাপটে কাবু সকলেই। এই গরমে রাস্তায় বেরোলেই এখন যে জিনিসটার দিকে প্রথমেই চোখ যায় তা হল আইসক্রিম। এই গরমে বাচ্ছা থেকে বুড়ো–কারোরই মন্দ লাগে না এই জিনিসটা। কারোর পছন্দ কোন্ আইসক্রিম, কারোর আবার কাপ অথবা কারোর কাঠি আইসক্রিম। আজও গরমের বিকেলে বিভিন্ন রঙের কাঠি আইসক্রিম বা পপসিকল যেন আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি লোভনীয়। এমনকি ছোটোবেলায় স্কুল ছুটির পর ছুটে যেতাম আইসক্রিমওয়ালাদের কাছে আর মা-বাবার কাছে বায়না করতাম একটা কাঠি আইসক্রিমের জন্য। কিন্তু অনেকেই জানেন না এই কাঠি আইসক্রিম তৈরি হওয়ার পিছনে মজাদার এক ইতিহাসের কথা। চলুন, আজ জেনে নিই কীভাবে তৈরি হয়েছিল সকলের প্রিয় এই কাঠি আইসক্রিম।
না, কোনোরকম ভাবনা চিন্তা করে নয় বরং একেবারে আচমকাই তৈরি হয়েছিল এই কাঠি আইসক্রিম। শুনলে অবাক হবেন যে উদ্ভাবক তার আবার বয়স ছিল তখন মাত্র এগারো বছর। এও কি সম্ভব? হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও তা সত্যি। ১১ বছর বয়সী সেই ছেলেটি হলেন আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো বে এলাকার কিশোর ফ্রান্সিস উইলিয়াম এপারসন। তিনি একদিন দুপুরবেলা বাড়ির খোলা বারান্দায় ভুল করে একটি শরবতের গ্লাস ফেলে রেখে ঘরে ঢুকে যান। আর সেই গ্লাসটির মধ্যে ছিল খানিকটা চিনি মেশানো সোডা-শরবত আর একটি কাঠি। সেই দিন পড়ে থাকা গ্লাসটির কথা ভুলেই গেছিলেন তিনি, তাই রাতভর ঠান্ডায় গ্লাসের শরবত জমে পরিণত হয়েছিল একটুকরো বরফে।
পরদিন এপারসন দেখে সেই বরফ ও তার মাঝে কাঠিটি খাড়া হয়ে আটকে আছে। সেই বরফের গোলা চেখে নিজেই সেই অসাধারণ স্বাদের কথা তিনি জানান তাঁর পরিচিতদের। তারাও প্রশংসায় পঞ্চমুখ! ব্যস, এভাবেই ১১৭ বছর আগে ১১ বছর বয়সী এক খুদের হাত ধরে কাঠি আইসক্রিমের সঙ্গে পরিচিতি ঘটে সমাজের। নিজের পদবীর সঙ্গে ‘আইসিকল’ শব্দটি মিশিয়ে এই কাঠি আইসক্রিমের গালভরা এক নামও দিয়েছিলেন ‘এপসিকল’। বাড়ির আশপাশে এপসিকল বিক্রি করে কিছু রোজগারও করেছিলেন তিনি। তারপর ১৯২৩ সালে অবশ্য নিজের গণ্ডির বাইরে তা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। ক্যালিফোর্নিয়ার নেপচুন বিচ নামে একটি বিনোদনমূলক পার্কটিকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন বিক্রির জন্য। তাই পার্কে ঘুরতে আসা কচিকাঁচাদের কাছে তখন আলাদাই কদর এপসিকলের!
দিনে দিনে এই আইসক্রিমের জনপ্রিয়তা দেখে এপারসন পেটেন্টের আর্জি জানান। সাল তখন ১৯২৪। ততদিনে এপসিকল নাম পরিবর্তন হয়ে রাখা হয়েছিল পপসিকল। এই নামেই বিশেষ অধিকার পেয়েছিল কাঠি আইসক্রিম।তবে নামে কী বা আসে যায়? আজও কাঠি আইসক্রিম শুনলেই এক পায়ে খাড়া কচিকাচাদের দল। এই গরমে রাস্তায় বেরোলেই একটুকরো তৃপ্তি হাতে পেলে আর কী চাই! তবে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা লাগলে মায়ের বকুনিরও ভয় থাকে বইকি। তবে তখন আর কে মনে রাখে! সুবিধেও কম নয়। একসময় এক বিজ্ঞাপনে এপারসন লিখেছিলেন, “হাত দিতে হয় না। কাঁটা-চামচ বা প্লেটের দরকার নেই। দারুণ দেখতে এই জমাটবাঁধা মিঠাইটি সহজেই মুখে পোরা যায়।”
Discussion about this post