মহম্মদ নিজাম, সাহিত্যিক, বাংলাদেশ – “বেঁচে থাকা জরুরি কেন?” যদি কেউ আমাকে এই প্রশ্ন করেন, আমি বলবো, আমার খুব লোভ হয় জীবনকে উপভোগ করার। আর এই জীবনকে উপভোগ করার যতগুলো ভালো উপায় আমি জেনেছি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বই পড়া। সময়কে অতিক্রম করার প্রযুক্তি এখনও আমরা আবিষ্কার করতে পারিনি। কিন্তু আমি যখন একটা ইতিহাসের বই হাতে তুলে নেই, এক টানে চলে যাই প্রাচীন পৃথিবীতে। আমার চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায় পৃথিবীর প্রথম কৃষাণী মেয়েটি, গড়ে উঠে পিরামিড, হরপ্পা, চন্দ্রকেতুগড়, মহাস্থানগড়ের মতো সুপরিকল্পিত নগর সভ্যতা। আমার হাতে যখন একটা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী বা বিশুদ্ধ বিজ্ঞান গ্রন্থ উঠে আসে, আমি দেখতে পাই বিগ ব্যাং থেকে শুরু করে প্রতিটা নক্ষত্রের জন্ম লগ্ন। মহাকাশ যানে চেপে চড়ে ঘুরে বেড়াই দু’হাজার বছর পরের নক্ষত্র-নগরে। বই ও বইমেলা আমার কাছে ঠিক এতটাই উদ্দীপনা জাগানিয়া, এতখানিই গুরুত্বপূর্ণ। মহাকাল নিজে এখানে ঘুমিয়ে থাকে প্রতিটা বইয়ের পাতায়। পৃথিবীর সব আশ্চর্য সৌন্দর্য্য বুকে ধারণ করে বইগুলো অপেক্ষা করে কৌতূহলী পাঠকের। আমি তাই নিমন্ত্রণ জানাই, আগ্রহী সকল পাঠক ও অনুসন্ধানী মননকে। আসুন, বইয়ের এই মহোৎসবে যোগ দেই।
রায়তী ভট্টাচার্য্য, অভিনেত্রী, ভারত – বইমেলা শুরু হচ্ছে। কিন্তু মোবাইল, পিডিএফ এর দৌলতে হাতে নিয়ে বই পড়ার অভ্যাস আমাদের অনেকেরই কমেছে। তবু্ও বইমেলা মানে তো শুধু বই কেনা নয়; হরেক রকম বই হাতে নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ। অনেক প্রিয় লেখকের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়া, ডিজিটাল আড্ডার যুগে বই কেনার ছুতোয় বন্ধুদের সঙ্গে একটু আড্ডা দেওয়ার অবকাশ। সবমিলিয়ে বইমেলা একটা সেন্টিমেন্ট। মহামারীর পরে ভয় কাটিয়ে উঠে আবার দুই বাংলার বইমেলা জমজমাট হয়ে উঠুক এই কামনাই রইল।
গৌরব চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গীত শিল্পী, ভারত – আমি যেহেতু কলকাতার তাই ছোট থেকে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলাই দেখে আসছি। বইমেলা অবশ্যই আমাদের সবারই জীবনের অংশ। বইয়ের ব্যাপারে অন্ততঃ বাঙালিরা খুবই আবেগপ্রবণ। পৃথিবীর নানান জায়গায় অনেক ধরণের বইমেলা হয়। কিন্তু আমাদের এই বাংলার বইমেলার অন্যতম দিক এই প্যাশন এবং ভালোবাসা। সেই কারণেই আমি কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলাকে এতোটা অসাধারণ দেখেছি। আমি ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলার কথাও শুনেছি। তাই দুই বাংলার মানুষকে এতাই বলব যে আনন্দ করুন, নতুন পুরনো যা যা বই কিনতে চান কিন্তুন। সুন্দর কাটুক বইমেলা।
মহঃ সাহেদুল ইসলাম শুভ, সঙ্গীত শিল্পী, বাংলাদেশ – শুধু বই পারে কল্পনাশক্তিকে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি মনের ভেতর নিজের একটি জগৎ তৈরি করতে। সেই জগৎ হোক কাঁটাতারকে উপরে ফেলে দুই বাংলার সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন আর অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার।
কবীর চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গীত শিল্পী, ভারত – বইমেলা আসছে। না, শুধু কলকাতায় নয়, বাংলাদেশেও। আমরা আসলে বইমেলা শুনলে কেবল একখানা নির্দিষ্ট মেলার কথা ধরে নিই, তবে আসলে বইমেলা মানে একটি সংস্কৃতি। বেলঘরিয়া থেকে বড়িশা, মেদিনীপুর থেকে মিলনমেলা প্রাঙ্গণ, ঢাকুরিয়া থেকে ঢাকা, বইমেলার ইতিহাস সুবিশাল এবং সুপ্রতিষ্ঠিত। এপার ওপার দুই বাংলার বইমেলাকে আমার অন্তহীন ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছা জানাই। বন্ধুরা, আমরা আরো বই পড়ি আসুন। পড়তেই থাকি। আজীবন।
পৌলমী হালদার ঘোষ, সাহিত্যিক, ভারত – বই জিনিসটা মানুষের সর্বক্ষণের সঙ্গী। যখন কেউ থাকে না, তখনও বই-ই মানুষের সাথে থাকে, বই-ই ঘরে বসা মানুষকে ঘুরিয়ে আনতে পারে দূর দূরান্ত থেকে। আর বইমেলা এমন এক উৎসব যা কোন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী হয় না। এত বড় উৎসব শুধুমাত্র মনের টানে আর বইয়ের টানে চলে আসছে এতদিন। আবার আসছে কলকাতা আর ঢাকা বইমেলা। আমার মনে হয় প্রত্যেক মানুষের একবার হলেও বইমেলা ঘুরে আসা উচিৎ। আজকের যুগে যেখানে প্রায় সবই ডিজিটাল, অনলাইন, মেশিনের মাধ্যমে হয়ে যাচ্ছে, সেই সময় দাঁড়িয়ে বাঁধাই করা বইগুলোই একমাত্র মানুষকে মেশিন বহির্ভূত জগতে এনে ফেলে। বইয়ের গন্ধ, ছাপার অক্ষর, পাতার ভাঁজে লুকিয়ে থাকে ভালবাসা। সেগুলোর আস্বাদ নেওয়াও প্রয়োজন। অনেক নতুন লেখকরা বই প্রকাশ করেন, তাদের উৎসাহ দিন, ভাল লাগলে কিনুন। পছন্দের লেখকদের স্টলের বাইরে দাঁড়িয়ে লাইন দিয়ে অটোগ্রাফ নিন। ঘুরে ঘুরে বহু কালের ইচ্ছা পূরণ করে কিনে ফেলুন কোন পুরনো বই বা বইয়ের সিরিজ। বইমেলাও হয়ে উঠুক জীবনের এক অঙ্গ। বাঙালির অন্যতম বড় এই উৎসব সফল করুক ঢাকা এবং কলকাতার বাঙালিরা।
তানিয়া চক্রবর্তী, সাহিত্যিক, ভারত – বাংলাদেশ আর ভারত এই দুই বাংলার যে বাঙালির টান তা তো অক্ষুন্ন থাকবেই যা কিছুই হোক। বিশেষতঃ এই পশ্চিম বাংলা আর বাংলাদেশ যে গন্ধে, শব্দে, খাদ্যে,বস্ত্রে একেবারে ভরপুর বন্ধুতায় জড়িয়ে তা বলাই বাহুল্য! আমার পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবেড়িয়ায় থাকতেন। সেখানেই আমার মায়ের ঠাকুরদার সাহিত্যচর্চা শুরু…সেসব ইতিহাসের কথা ভাবলে পুলকিত হই। এই দুই বাংলা আসলে অভিন্ন! ২০২২ দুবাই- বইমেলায় এক সন্ধ্যেবেলায় দুবাই কনস্যুলেটে ভিন্ন ভাষাভাষী কবিরা কবিতা পড়ার পরেও আমরা যখন বাংলাদেশ ও ভারতের কবিরা একত্রিত হলাম যেন জুড়ে গেলাম। আমরা একটানা অনেকরাত অবধি কবিতা পড়েছি ;বিশিষ্ট কবি কামাল চৌধুরি ও তারিক সুজাত’দার সঙ্গে।ভাষার যে কী টান তা এক ভাষার শব্দ ও সুরই বুঝিয়ে দেয়! করোনার পর আবার পাতায় পাতায় শব্দরা হেসে উঠবে…দুই সীমানা ধরে বাংলা খিলখিলিয়ে উঠবে এর থেকে বড় উৎসব আর কীই হতে পারে! বাংলাদেশে একাধিকবার গিয়েছি…গত কয়েক বছর ধরে যেতে পারিনি…তাই অভাব বোধ করি। দুই বাংলা হাত ধরে বইয়ের আনন্দে মেতে উঠছে এর থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না। সকলকে ফুলেল শুভেচ্ছা।
Discussion about this post