‘নীলকুঠি’। এই শব্দটার সঙ্গে আমরা কমবেশি প্রায় সকলেই বেশ পরিচিত। ইংরেজরা এদেশে ঘাঁটি গেড়ে বসার পর গরিব চাষিদের ওপর নানারকমের অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছিল। তার সাক্ষ্য হিসেবে সেসময়ের ঘটনা ইতিহাসের পাতার ছত্রে ছত্রে বর্ণিত রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনের হাড়হিম করা অত্যাচারগুলির মধ্যে অন্যতম একটি ছিল নীলচাষ। গরিব চাষিদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাদের দিয়ে জোর জবরদস্তি নীলচাষ করানো হয়ে উঠেছিল ঊনবিংশ শতকের কলঙ্কিত অধ্যায়। আর এই চাষের প্রয়োজনেই বাংলার নানাদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়ে উঠেছিল নীলকুঠি। অতীতের সাক্ষী এই নীলকুঠির অস্তিত্ব থেকে বাদ যায়নি কলকাতার যমজ শহর হাওড়াও। চলুন জেনে নিই, কোথায় এবং কেমন আছে সেই নিদর্শন!
হাওড়া জেলার অন্তর্গত আমতার ১ নং ব্লকের রসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এক বিখ্যাত গ্রাম কলিকাতা। ‘ছোট কলকাতা’ বলে এই গ্রামের সুনামও রয়েছে বেশ। আর এই গ্রামেই গড়ে ওঠা নীলকুঠি হয়ে উঠেছিল একসময় নীলকর সাহেবদের বাণিজ্য কেন্দ্র। বিদেশিদের শাসন শেষ হয়েছে বটে, তবে বাংলার চাষিদের উপর নীলকর সাহেবদের নির্মম অত্যাচারের নীরব সাক্ষ্য যুগ যুগ ধরে বয়ে নিয়ে চলেছে আমতার এই নীলকুঠি। কালের গর্ভে এবং প্রশাসনিক অবহেলার তীব্রতায় অবশ্য এটির স্মৃতিচিহ্ন ছাড়া তেমন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। পরিণত হয়েছে ঝোপঝাড়ে ঘেরা একপ্রকার ধ্বংসস্তুপে। শুধুমাত্র পলেস্তারা খসা কয়েকটি ইটের দেওয়াল এখন জানান দেয় কয়েকশো বছর আগেকার সেই জীবন্ত ইতিহাসকে। দেখলে মনে হবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটুকুও যেন দিন গুনছে বিলুপ্তি ও বিস্মৃতির অপেক্ষায়।
এ তো গেল কুঠিটির কথা। অনেকেই জানেন নীলচাষের জন্য প্রচুর জলের প্রয়োজন হয়। তাই সেই সময় নদীর তীরেই বিশেষত নীলকুঠি গড়ে উঠত। ব্যতিক্রম ঘটেনি আমতার কলিকাতা গ্রামেও। অদূরে দামোদর নদী থাকলেও চাষের সুবিধার্থে একটা বড় পুকুর কাটা হয়েছিল নীলকুঠির পাশে। কিন্তু সেই পুকুরের অবস্থাও তথৈবচ। ইতিহাসের সাক্ষ্য বহনকারী এমন এক জ্বলন্ত নিদর্শনের দুর্দশা মেনে নিতে পারেন না স্থানীয়রাও। তাই তারা এই ভগ্নপ্রায় নীলকুঠিটিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এই ধ্বংসাবশেষকে কেন্দ্র করে একটি ছোটখাটো মিউজিয়াম ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলারও পক্ষপাতী। তাতে আর যাই হোক, গ্রামটিরও কিছুটা উন্নতিসাধন ঘটবে বলে আশাবাদী স্থানীয় গ্রামবাসীরা।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – কঙ্কণ মাজি
Discussion about this post