প্রতিবছর ২ জুলাই পালিত হয় ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস জার্নালিস্টস ডে। ক্রীড়াজগতের অগণিত গল্পকে সামনে আনার নেপথ্যের নায়কদের সম্মান জানাতে। সংবাদমাধ্যমে পুরুষশাসিত ক্রীড়া সাংবাদিকতার জগতে, মহিলারাও আজ বহু বাধা টপকে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন, নিচ্ছেন। তাঁদের লেখনী, বিশ্লেষণ, ও ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে আরও বিস্তৃত করেছে। এই দিনটি শুধুমাত্র ক্রীড়া সাংবাদিকদের উদযাপনের দিন নয়, বরং তাঁদের লড়াই, পথচলা এবং অবদানের স্বীকৃতির দিন। তেমনই এক ক্রীড়া সাংবাদিক সারদা উগ্রা।
ক্রীড়া সাংবাদিকতার জগতে এক অন্যতম উজ্জ্বল নাম সারদা উগ্রা। ১৯৮৯ সালে যখন শচীন তেন্ডুলকর ভারতের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলতে নামেন, তখনই শারদা সাংবাদিক হিসেবে তাঁর প্রথম কাজ শুরু করেন। এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হওয়ায় কেরিয়ারের সুযোগ সীমিত ছিল, কিন্তু খেলাধুলার প্রতি তাঁর ভালবাসা ছিল সীমাহীন। নিজেই বলেছিলেন, “আমি খুব খারাপ ক্রীড়াবিদ ছিলাম, কিন্তু খেলাধুলা দেখতে, পড়তে এবং এর সম্পর্কে লিখতে পছন্দ করতাম।”
সারদার কলেজজীবনে ঘটেছিল এক স্মরণীয় মুহূর্ত। সারদা এবং তাঁর বন্ধুরা পাকিস্তানের কিংবদন্তি অধিনায়ক ইমরান খানের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তখনই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন এই জগতে তাঁর জায়গা আছে, কাজের আনন্দ তিনি পেয়েছিলেন। এরপর তাঁর প্রথম চাকরি হয় মুম্বাইয়ের মিড-ডে পত্রিকায়। সেখান থেকেই শুরু হয় এক দীর্ঘ, কঠিন, কিন্তু দুর্দান্ত যাত্রা। ক্রীড়া সাংবাদিকতার পুরুষপ্রধান জগতে একমাত্র মেয়ে হিসেবে প্রেস কনফারেন্সে থাকাটা যেমন কঠিন ছিল, তেমনই প্রশ্ন করতেও ভয় পেতেন তিনি—”অনেক বছর ধরে আমি প্রশ্ন করতে পারিনি কারণ আমি ভয় পেতাম, লোকেরা বলবে, ‘দেখো, একটা বোকা মেয়ে প্রশ্ন করছে।’”
হাল ছাড়েননি সারদা। ESPN ও Cricinfo-তে সিনিয়র সম্পাদক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি ভারত এবং বিশ্বের বহু বড় টুর্নামেন্ট কভার করেছেন। এমনও দিন গেছে, যখন ইনডোর স্টেডিয়ামে কোনো টয়লেট না থাকায় তাঁর জন্য পুরো ড্রেসিং রুম খালি করে দিতে হয়েছে। সেইসব অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও শক্ত করেছে। আজ তিনি শুধুমাত্র একজন প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক নন, বরং এমন একজন পথিকৃৎ, যিনি অসংখ্য তরুণীকে শিখিয়েছেন, একলা হাঁটা মানেই হার নয়, বরং তাইই হতে পারে ভবিষ্যতের রাস্তা তৈরির প্রথম পদক্ষেপ।
Discussion about this post