তানসেনের গান শুনে আকাশ থেকে অঝোরে নামত বৃষ্টি, জ্বলে উঠত আগুন। হ্যামিলটনের সেই বাঁশীওয়ালাকে মনে পড়ে? যার বাঁশীর সুর শুনে তাকে অনুসরণ করেছিল একটা গোটা শহরের ইঁদুরেরা? কারণ, হ্যামিলটনের সেই বাঁশীওয়ালার বাঁশীর সুরে ছিল ম্যাজিক! ‘গুপী গায়েন বাঘা বায়েনে’র গুপীর গলাতেও ছিল জাদু, তার গানের সুর কানে গেলেই আশেপাশের সমস্ত মানুষ হয়ে যেত নিশ্চল। এই সবই শিল্প এবং কিছুটা অলৌকিকতার কামাল। বাস্তবে যখন সুর বা সঙ্গীত হয়ে ওঠে ম্যাজিক ছাড়াই ম্যাজিশিয়ান, তখন? এমনটাই ঘটতে চলেছে বলে বিশ্বাস ডাক্তার ও বিজ্ঞানীদের।
সঙ্গীত এবং মানুষের শরীরে সঙ্গীতের প্রভাব নিয়ে বহুদিন ধরেই হয়ে এসেছে গবেষণা। বহুবারই বলা হয়েছে ‘মিউজিক থেরাপি’ সারিয়ে দিতে পারে মস্তিষ্কের প্যারালাইসিস, সারিয়ে দিতে পারে আরও বিভিন্ন অসুখ। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের ক্লাসিক্যাল মিউজিক শোনার পরামর্শ দেওয়া হয় অনেক দেশে। এছাড়া ভুরি ভুরি ঘটনার কথা শোনা যায়, যেখানে মিউজিক থেরাপির সাহায্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন মানুষ। কিন্তু এসব কতখানি সত্য?
সেতার নিয়ে কাজ করেছেন সঙ্গীত গবেষক আচার্য সঞ্জয় চক্রবর্তী এবং দিল্লি এইমসের চার চিকিৎসক। ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইমিউনোলজি অ্যান্ড ইমিউনোজেনেটিকস এবং ফিজিওলজি বিভাগের এই চার চিকিৎসক হলেন পরীক্ষিত স্যানাল, কৌশিক রায়, দীনু এস চন্দ্রন এবং কে কে দীপক। গবেষণাপত্রটি গ্রহণ করেছে বিশ্ববন্দিত পত্রিকা গোষ্ঠী এলসেভিয়ারের ‘বায়োমেডিক্যাল সিগন্যাল প্রসেসিং অ্যান্ড কন্ট্রোল’। গবেষণাপত্রটি রিভিউ করেছেন বিশ্বের বহু বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা। সঞ্জয়বাবু বলেছেন, “আমরা দেখেছি মৃদু স্বরে বাজানো সঙ্গীত শরীরের উপর বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।“
শুদ্ধ এবং শুদ্ধ ও কোমলস্বর মিশ্রিত বিলাবলের ঠাট ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের সামনে বিভিন্ন সপ্তকে বাজানো হয়েছিল। তার সঙ্গেই রেকর্ড করা শুরু হয় প্রত্যেকের রক্তচাপ, নাড়ির গতি এবং ইসিজি। সুর শোনা মাত্রই ২৫ জনেরই রক্তচাপ,নাড়ির গতি এবং ইসিজিতে ফারাক দেখা গেছে। সেই ফারাক নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। সঞ্জয়বাবুর কথায়,”এরপর আমাদের লক্ষ্য হল, বিজ্ঞানসম্মতভাবে কোন রোগে, কী ধরনের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, কীভাবে কাজে আসতে পারে, তা নির্ণয় করা। আসলে ভারতীয় মার্গসঙ্গীত প্রকৃতির দর্পণ। মানবশরীরও প্রকৃতিরই অংশবিশেষ। তাই সাড়াও দিচ্ছে শরীর।“
ছবি – অঙ্কিতা পাল
Discussion about this post