তুলোর বলের মতো প্রাণীটি। আদুরে ম্যাঁও শব্দে মায়া জাগায় সহজেই। কখনও এঁটো করে রাখে গেরস্তের হেঁশেল। আবার কখনও গৃহকর্ত্রীর দয়ায় জুটে যায় মাছভাতও। আমাদের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায় তুলোটে এই প্রানীটি। চোখেমুখে লেগে থাকে মজন্তালি সরকার গোছের হাবভাব। তবে তা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করলে কী হবে! দক্ষিণ ভারতে তিনিই দেবী। দেবী মাগাম্মা। কর্ণাটকের একটি গ্রামে বেশ সাড়ম্বরে পূজিতা হন তিনি।
শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দির। মূল মন্দির গড়ে উঠেছে তিনটি মন্দিরের সমন্বয়ে। গ্রামের নাম বেকাল্লা। মার্জালপুরের কাছেই গ্রামটি। গ্রামের নামকরণও বেড়ালের নামানুসারে। কন্নড় ভাষায় ‘বেক্কু’ মানে বেড়াল। সেই সূত্রে গ্রামটি বেকাল্লা। আর পাশের গ্রাম মার্জালপুর এসেছে সংস্কৃত শব্দ মার্জার তথা বেড়াল থেকে। দেবী মাগাম্মা আসলে এই অঞ্চলের মূল দেবী। গ্রামবাসীদের ধারণা দেবী বেড়াল রূপে ঘুরে বেড়ান। গ্রামের সবার ভালোমন্দের খেয়াল রাখেন। মানুষের কল্যাণ করেন। সব বিপদ থেকে বাঁচান। মন্দিরেও তিনি বেড়াল রূপে অধিষ্ঠান করেন। তাই দেবীর বেড়াল মূর্তিই একশো বছর ধরে পুজো পাচ্ছে দঃ ভারতে।
আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির পরতে পরতে জড়িয়ে আছে সংস্কার। বিড়াল নিয়েও রয়েছে। রাস্তা কাটলে যাত্রা নেই। কালো বেড়াল অশুভ। কিন্তু কী অদ্ভুত! এই দেশেরই অন্য প্রান্তে সেই বেড়ালই দেবী। স্থানীয় বিশ্বাস, বহু বছর আগে মার্জার রূপে, দেবী দর্শন দিয়েছিলেন এই দেবালয়ে। প্রতি বছর তাই মাগাম্মা মন্দিরে চলে উৎসব। উৎসবের নামও মাগাম্মা উৎসব। চলে তিন-চার দিন ধরে। এই ক’দিন ধূমধাম করে পুজো হয় বিড়ালদের।
সাধ করে রেঁধে রাখা মাছের ঝোল হোক বা গরম দুধের কড়াই ! মার্জার যদি একবার মুখ দিয়ে ফেলে! গেরস্ত একেবারে রে রে করে তাড়া করে তাদের। এইসব অরাজকতা আমাদের এখানে চললেও, বেকাল্লা গ্রামে কিন্তু বেড়াল তাড়ানো নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ, আঘাত বা প্রহার করাও। কেউ যদি রাগের বশে বেড়াল পেটায়, তাকে ছাড়তে হবে গ্রামও। এই সবই মাগাম্মা দেবীর বিড়াল রূপে ঘুরে বেড়ানোর ফল। বলা কি যায়, মার খাওয়া মার্জার যদি স্বয়ং দেবীই হন!
Discussion about this post