সর্ব ধর্ম ও নানাবিধ সংস্কৃতির মিলনমেলা আমাদের মহান ভারতবর্ষ। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কাল থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের, ভারতীয় ইতিহাসের প্রতিটি পর্বে ফুটে উঠেছে সর্বধর্ম ঐক্যের ছবি। তবে বর্তমান সময়ে দেশের বিভিন্ন অংশে দেখা দিচ্ছে ধর্মের নামে লড়াই, ধর্মে ধর্মে বিভাজন। পরধর্ম অসহিষ্ণুতার এই আবহেও স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ব্যাতিক্রমী আগ্রা। ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী আগ্রাতে, হিন্দু মুসলিম উভয় ধর্মের মানুষ একসাথে মেতে ওঠেন শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি পালনে।
মুঘল সম্রাট শাহজাহানের তৈরি তাজমহলের জন্য বিখ্যাত উত্তরপ্রদেশের আগ্রা। আগ্রা শহরটি মুসলিম অধ্যুষিত একটি অঞ্চল হলেও আগ্রার খেরিয়া অঞ্চলে জাঁকজমক করে পুজো হয় শ্রী কৃষ্ণের। বিগত ১৬ বছর ধরে এখানে জন্মাষ্টমীর দিন শ্রী কৃষ্ণ পুজো পান হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে উভয় ধর্মের মানুষদের থেকেই। খেরিয়ার এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখতে ভিড় জমান আশেপাশের অঞ্চলের বহু মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ শাদিল কুরেশি এবিষয়ে জানিয়েছেন, “আমরা বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করি। সাজসজ্জা থেকে শুরু করে আমরা সবাই সব দিক ভাগ করে নিয়ে কাজ করি। আমাদের বিশ্বাস, উৎসব উদযাপনে কোন ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই। গত ১৬ বছর ধরে এভাবেই এখানে পালিত হয়ে আসছে জন্মাষ্টমী। আমরা চাই, ভবিষ্যত প্রজন্মও এভাবেই যেন পালন করে এই উৎসব।” এখানকার জন্মাষ্টমী পালনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হল, এই দিন এই অঞ্চলের মুসলিম বাচ্চারা শ্রী কৃষ্ণের মতো সাজে। আর এই ছোট্ট কৃষ্ণরূপী শিশুদের ঘিরেই পালিত হয় জন্মাষ্টমী। উৎসবের আয়োজনকারী কমিটির সভাপতি হরিশঙ্কর শুক্লা জানান, এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রেম ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা ছড়িয়ে দিতে চান তাঁরা। তাঁর মতে, “১৬ বছর ধরে এভাবেই পরস্পর পরস্পরের সাথে জড়িয়ে বেঁচে আছি আমরা। তাই আমাদের পুজো-উৎসবও একসঙ্গে পালন করি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, আগামী প্রজন্মও যেন এই ধারা ধরে রাখে।”
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – Sound Pasta
Discussion about this post