রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বহু পরিচিত গল্প ‘ঘাটের কথা’। ঘাট যেন কথা বলে, তার ঝুলিতে অনেক গল্প। আমাদের উত্তর কলকাতার এই সমস্ত ঘাটের কথা শুনতে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পদযাত্রার আয়োজন করেন ইন্টিগ্রেটেড ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের পক্ষ থেকে রাহুল চক্রবর্তী।
এই দিনের পদযাত্রার ডাক পেয়ে হাজির হয়েছিলেন আন্দুল জগৎবন্ধু কলেজের তরফে ডক্টর সারদা মন্ডল, ফ্যাকাল্টি সৌরভ হালদার এবং এই দিনের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃত কলেজ ও ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডক্টর কল্লোল দাশগুপ্ত। এছাড়াও ছিলেন ছাত্র ছাত্রীরা। মোট পঁচিশ জন সদস্যের এই পদযাত্রার লক্ষ্য ছিল—পরিবেশের প্রতি মানুষকে আরো সচেতন করে তোলা এবং বাঙলার ঘাটের পুরনো ঐতিহ্যগুলির স্মৃতিকে উস্কে দেওয়া। ‘The Ghats of Kolkata’র কর্মসূচিতে এঁরা যুক্ত করেছেন মূলত উত্তর কলকাতার কয়েকটি ঘাটকে—বাগবাজার মায়ের ঘাট, বাগবাজার ঘাট, কুমারটুলি ঘাট, বেনিয়াটোলা ঘাট, আহিরীটোলা ঘাট এবং শোভাবাজার। এই ঘাটগুলির ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং তার নিরিখে এদের বর্তমান অবস্থা, এই সব মিলিয়ে মানুষের কাছে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন শ্রী রাহুল চক্রবর্তী ও অন্যান্যরা। এই পদযাত্রার সময়ই তাঁরা উপস্থিত হয়েছেন কুমোরটুলির গোপেশ্বর অ্যান্ড সনস্ এর ওয়ার্কশপে। এখানেই শ্রদ্ধেয় শরৎচন্দ্র বোস নিজে বসে থেকে নিজের প্রতিকৃতি তৈরি করিয়েছিলেন। মূর্তি গড়ার নৈপুণ্যে এদের জুড়ি মেলা ভার।
মানুষকে সচেতন করার এক অভিনব পন্থা তাঁরা অবলম্বন করেছেন। এইদিন তাঁরা মানুষের মধ্যে বিলি করেছেন মোট ৫৪৩টি সিড পেন্সিল। প্রথমত এই পেন্সিল তৈরি হয় রিসাইকেল কাগজ থেকে। অবশ্য তাই বলেই মাথাটা দিব্যি চিবিয়ে ফেলা যাবে না কারণ এই পেন্সিলের মাথায় থাকে সিড বা বীজ। লিখতে লিখতে যখন পেন্সিল ছোট হয়ে যাবে তখন এই বীজ মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। ভবিষ্যতে এই প্রতিটি পেন্সিল একটি করে গাছ প্রসব করবে। রাহুল চক্রবর্তীর বিশ্বাস, “The change should be within us.” তাই ওঁরা নিজেরাও এই পেন্সিল একটি করে নিয়েছেন ব্যবহারের জন্য। মাত্র একদিনের পদযাত্রাতেই এঁরা থেমে নেই।
রাহুল চক্রবর্তী জানিয়েছেন – “আমাদের এই কর্মসূচীকে আরও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের উদ্যোগ থাকবে প্রতিটি কলেজের বাচ্চাদের মধ্যে সচেতনতা কর্মসূচি করার। আমরা বিনামূল্যে ২৫০টি সিড পেন্সিল ডিস্ট্রিবিউট করতে চলেছি কলেজ পিছু। আর তার জন্য দরকার কলেজের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া। এছাড়াও কলকাতা ঘাটকে কেন্দ্র করে ডকুমেন্টেশনের কাজও শুরু হতে চলেছে আমাদের পক্ষ থেকে”। এই কর্মসূচীর রেশ ধরেই এঁরা শুরু করছেন ‘Sustainable Eco Warrior 2023’। আর যাঁরা তাঁদের চলার পথে দিশা দেখাচ্ছেন ‘Eco Thinker’ দ্বারা তাঁদের অলংকৃত করা হচ্ছে। আমাদের সমাজের সচেতন মানুষেরা এখনো আশায় বুক বাঁধছেন, তাগিদ অনুভব করছেন কলকাতার ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে, প্রকৃতিকে রক্ষা করতে। তাঁদের এই প্রচেষ্টাকে ডেইলি নিউজ কুর্ণিশ জানায়।
Discussion about this post