জীর্ণ পুরনো বাড়ির দিকে চোখ মেললেই ধরা পড়ে ইতিহাস। আর পুরনো বাড়ির কথা শুনলেই ভেসে ওঠে উত্তর কলকাতার ছবি। কিন্তু না আজ একেবারেই উত্তর কলকাতার কোনো বাড়ির ঠিকানা এনে হাজির করিনি। বরং কলকাতা থেকে একটু দূরেই ইছাপুর। আর সেখানেই গঙ্গার ধারে আজও ইতিহাস বুকে নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ঐতিহ্যময় এক বাড়ি। যে বাড়ি বিখ্যাত পরীবাড়ি নামে। এই বাড়ির মাথায় মস্ত তিন পরী থাকায় এরূপ নামকরণ। ইচ্ছাপুর নবাবগঞ্জে অবস্থিত এ বাড়ির ইতিহাস ঘাঁটলে উঠে আসে বাঞ্ছারাম মণ্ডলের নাম। আর সেই থেকেই এ বাড়ির আরেক নাম মণ্ডল ভবন। বাড়িটি তৈরি হয় ১৯০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। এ বাড়ি তৈরি করিয়েছিলেন গদাধর মণ্ডল। বাড়ির বাইরে তাঁর নামের ফলক আজও উজ্জ্বলভাবে দেখা যায়।
এ বাড়ির ছাদ থেকে গঙ্গা দেখা এক ঐশ্বরিক দৃশ্য। মনে হয় যেন জাহাজের ডেক। সূর্যাস্তের সময় এ জায়গার মোহ কাটানো ভার। খোলামেলা পরিবেশে গঙ্গার ধারে এমন বাড়ি খোদ কলকাতার বুকে কোথাও নেই। পরী বাড়িতে ইতিমধ্যে শ্যুটিং হয়েছে বেশ কিছু সিনেমার। ‘এলার চার অধ্যায়’, ‘মানো ইয়া না মানো’ র মতো সিনেমার বেশ কিছু অংশের শ্যুটিং কিন্তু এই বাড়িতেই।
আসলে এ বাড়ি মণ্ডল পরিবারেরই। বাঞ্ছারাম মণ্ডলের বংশধরেরা বর্তমানে এ বাড়িরই বাসিন্দা। তাই বসত বাড়ি হবার খাতিরে এখনও তা পর্যটনের রূপ পায়নি। বাড়িতে প্রতি বছর নিয়ম করে দুর্গা পুজো হয়। ২৫০ বছরের পুরনো ঠাকুর দালানে চলে অবাধে মানুষের আনাগোনা। ঐতিহাসিক এ বাড়ির সৌন্দর্য্য আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। প্রকৃতি আর ইতিহাসের এমন অনবদ্য জুটি সচরাচর দেখা যায় না। তাই পুজোর সময়ে সে সুযোগ হাতছাড়া না করে চলে আসুন। ইচ্ছাপুর স্টেশনে নেমে টোটো ধরে সোজা মণ্ডল ঘাট। আর সেই ঘাটের পাশেই বিরাজমান পরীবাড়ি।
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – অর্পণ ঘোষ কস্তুরী সাহা ও অনিন্দিতা মণ্ডল
Discussion about this post