ছোট থেকেই একটা বাচ্চাকে শেখানো হয় সায়েন্স পড়া মানেই জটিল সমস্যার সমাধান। কিন্তু এই চিন্তাটা কতটা ঠিক ভেবে দেখেছেন কি? বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিটি ছাত্রছাত্রী বড় বড় ইকুয়েশনের যাঁতাকলে পিষছে রোজ। মাথায় আসে না পারার হতাশা পিছিয়ে পড়ার কষ্ট। কিংবা মেধাবীদের উপর এসে পড়ে কখনো পরিবারের চাপ। শোনা যায়, শোক থেকেই নাকি শ্লোকের উদ্ভব। তাই অঙ্কের সমস্যাটায় আটকা পড়া ছেলেটির মেঘহীন আকাশের দিকে তাকিয়ে যদি কবিতার কলি ফুটে ওঠে ক্ষতি কি! সাহিত্য তার কাছে তখন ভালোবাসার রূপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু অবসরের সেইসব লেখা কি শুধুই ডায়েরির পাতায় থাকবে? না তা কখনোই নয়। ভালো লেখার ক্ষমতাকে সর্বসমক্ষে আনাটাও তো জরুরী তাই না! আর সেই উদ্দেশ্যেই একদিন নিয়ে আসা হল ‘ইকারাস’ লিটল ম্যাগাজিন।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তখন চরম উত্তপ্ত। এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে ফেটে পড়ে যাদবপুর ছাত্র সংগঠন। চলে তীব্র প্রতিবাদের দামামা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেয়ে যায় হ্যাশট্যাগ ‘হোক কলরব’। ঠিক সেইসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের কিছু ছাত্রছাত্রী তৎপর হয়ে ওঠেন। শুধু মুখে প্রতিবাদ নয় চাই প্রতিবাদী লেখাও। সেই সূত্র ধরেই সেদিন জন্ম নেয় ‘ইকারাস’। তারপর গুটিগুটি পায়ে এগিয়েছে তার বয়স। এবছর সে পাঁচে পা দিল। স্বপ্ন ছিল সাহিত্য ও বিজ্ঞানের মেলবন্ধন। তাই সমস্ত বিজ্ঞান বিভাগীয়দের হাতেই প্রথমে তুলে দেওয়া হয় এই পত্রিকাটি। তাদের কাছে খুলে দেওয়া হয় সাহিত্যকে আপন করে নেওয়ার এক সুযোগ। এই পত্রিকায় রয়েছে বিজ্ঞানকে নতুন রূপে চেনার ক্ষমতা। ভিড় জমিয়েছে পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিজ্ঞানের অজানা তথ্যরা।
আমফান ও কোভিডের বলিকাষ্ঠে বলি হয়েছে কলেজ স্ট্রিটের পুস্তক পরিবারটি। ঠিক সেইসময় ইকারাসের পাঁচ বছর পূর্তির কাজ মধ্য গগনে। কিন্তু পিছিয়ে পড়ার কোনো কারণ নেই। ইকারাস এগিয়েছে তার গতিতেই। বর্তমানের অনলাইনের যুগে পরিকল্পনা চলে ই-ম্যাগাজিন হিসেবে পত্রিকাটি প্রকাশ করার। কিন্তু ইকারাস তো শুধুই নতুন লেখক লেখিকার সাথ দিতে নয় মুদ্রনশিল্পীদের দলেরও পাশে থাকতে চেয়েছে বরাবর। ধুঁকতে থাকা প্রেসগুলোর দুর্দশাটা হয়ত ইকারাস এড়িয়ে যেতে পারেনি কোনোদিনই। তাই দুই মলাটের মধ্যেই বই আকারে আবারও আসেছে ইকারাস। প্রায় সাড়ে তিনশ পাতার ভার রয়েছে এটিতে। প্রাথমিকভাবে এটিকে ই-ম্যাগাজিন হিসেবে নিয়ে আসা হলেও ২০২১ এর তারকেশ্বরের লিটল ম্যাগাজিন মেলায় এটিকে হাতে পাওয়া যাবে। আজ ইকারাস শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। তার হাত পা গজিয়ে প্রসার পেয়েছে ভালোই। ইকারাস পাঁচ তৈরী হয়েছে জ্ঞান ও দক্ষতার একতায়। বই ম্যাগাজিন লিটল ম্যাগাজিন এখন বিলুপ্তির পথেই হাঁটা দিচ্ছে। সেই যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ইকারাস কিন্তু পিছু হটতে নারাজ।
Discussion about this post