রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামটি, বাঙালির কাছে এক পাহাড় সমান আবেগের প্রতিচ্ছবি। দেওয়ালে টাঙানো তার ছবি দেখে বেশ গম্ভীর মনে হলেও, বাস্তব জীবনে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বড্ড কৌতুক প্রিয়। জানা যায়, একদা রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজি একসঙ্গে বসে সকালের আহার করছিলেন। গান্ধীজি লুচি পছন্দ করতেন না। তাই তাঁকে ওটস খেতে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ খাচ্ছিলেন গরম গরম লুচি। গান্ধীজি তা দেখে বলে উঠেছিলেন, “গুরুদেব, তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছ।” গান্ধীজির মন্তব্যের উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বলছিলেন, “বিষই হবে, তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে। কারণ, আমি বিগত ষাটবছর যাবত এই বিষ খাচ্ছি।”
একধারে জমিদারি ও অন্যদিকে একজন বড় কবি হওয়ার পরেও বড়ই সাধারণ ছিলেন তিনি। উচ্চ নিম্নের ভেদাভেদ ভুলে সুযোগ পেলেই তিনি তার ভৃত্যদের সাথে হাসিঠাট্টাতে মেতে উঠতেন। একবার রবীন্দ্রনাথ তার ছাত্রছাত্রীদের সামনে গান গাইছিলেন, ‘হে মাধবী, দ্বিধা কেন?’ তখন তার ভৃত্য বনমালী আইসক্রিমের প্লেট নিয়ে তার ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ভাবছে ঘরে ঢুকবে কি ঢুকবে না। কারণ রবীন্দ্রনাথ গান গাইছেন, এ সময় বিরক্ত হবেন কিনা কে জানে। সেই সময় রবীন্দ্রনাথ বনমালীর দিকে তাকিয়ে গেয়ে উঠলেন, ‘হে মাধবী, দ্বিধা কেন?’ গান শুনে আইসক্রিমের প্লেট গুরুদেবের সামনে কোনোমতে রেখে লজ্জায় ঘর থেকে বেরিয়ে গেল বনমালী। তা দেখে রবীন্দ্রনাথ বললেন, “বনমালীকে যদিও মাধবী বলা চলে না। তবে তার দ্বিধা মাধবীর মতোই ছিল। আর আইসক্রিমের প্লেট নিয়ে দ্বিধা করা মোটেই ভালো নয়।”
১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর নিভৃতে ঈশ্বরচিন্তা ও ধর্মালোচনার উদ্দেশ্যে বোলপুর শহরের উত্তর-পশ্চিমাংশে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যা কালক্রমে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ নেয়। একদা শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক বিধুশেখর শাস্ত্রীকে রবীন্দ্রনাথ লিখে পাঠালেন, “আজকাল আপনি কাজে অত্যন্ত ভুল করছেন। এটা খুবই গর্হিত অপরাধ। এজন্য আগামীকাল বিকেলে আমি আপনাকে দণ্ড দিব।” গুরুদেবের এমন কথায় শাস্ত্রী মশাই তো একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। এমন কী অন্যায় তিনি করেছেন যার জন্য তাঁর দণ্ডপ্রাপ্য? শঙ্কিত শাস্ত্রী মশাই নির্ঘুম রাত কাটিয়ে পরদিন উপস্থিত হলেন কবির কাছে। পাশের ঘর থেকে একটি মোটা লাঠি হাতে আবির্ভূত হন রবীন্দ্রনাথ। শাস্ত্রী মশাইয়ের তখন ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাবার অবস্থা। কবি সেটি বাড়িয়ে ধরে বললেন, “এই নিন আপনার দণ্ড! সেদিন যে এখানে ফেলে গেছেন, তা একদম ভুলে গেছেন আপনি!”
সময়ের সাথে সবকিছু বদলে গেলেও বদলাননি কবিগুরু। শত প্রতিভাবান এই ব্যাক্তি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত মিশে ছিলেন সাধারণের সাথে। নিজের জীবন অতিবাহিত করেছিলেন সমাজ গঠনে। স্বাধীনতা আন্দোলনে ‘স্বদেশী সমাজ’ গঠনে ভারতবর্ষের মূল কেন্দ্র গ্রাম্যসমাজ গঠনের ব্রতকে প্রধান কর্তব্য বলে চিহ্নিত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি বলেছিলেন, “রাষ্ট্রক্ষমতায় ভাগ বসানোর চেয়ে সামাজিক প্রাধান্যের কর্মোদ্যোগ ভারতবর্ষের স্বরাজসাধনার পক্ষে বিশেষ জরুরি।”
তথ্য ঋণ – দৈনিক ইত্তেফাক, দ্য ডেইলি স্টার
Discussion about this post