চারিদিকে যখন স্বার্থ, মার দাঙ্গা, লোভ পরশ্রীকাতরতায় মানুষ অন্ধ হয়ে পড়েছে। নিজের সুখের খাতিরে অন্যের ক্ষতি করতেও যখন পিছপা হয় না। খেটে খাওয়া মানুষের রক্তজল পরিশ্রম আর ক্ষমতাবানের জুলুমবাজিতে যখন অতিষ্ঠ সারা বিশ্ব। ঠিক তখনই এমন কিছু খবর চোখের সামনে ভেসে ওঠে যা চোখের জ্বালা মিটিয়ে দেয় খানিক আরাম। মনে করিয়ে দেয় পৃথিবীর একাংশে এখনও মানবিকতা বেঁচে রয়েছে। তেমনই এক দৃশ্য আপনাদের সামনে নিয়ে আসতে চলেছি। যেখানে মানবিকতা ছাপিয়েছে অর্থের প্রয়োজনীয়তাকে।
প্রণবানন্দ সেন। বার্ণপুর স্টেট ব্যাঙ্ক শাখার সামনেই রয়েছে তাঁর একটি ছোট্ট সাইকেল স্ট্যান্ড। ব্যাঙ্কে আসা লোকেরা মাত্র ২ টাকার বিনিময়ে সাইকেলটি এখানে দাঁড় করিয়ে ব্যাঙ্কের কাজ সারেন। এটিই প্রণবানন্দবাবুর রোজগারের একমাত্র পথ বলা যায়। তবে সময় বিশেষে গাছ তলায় দাঁড়িয়ে মানুষের ব্যাঙ্কের বিভিন্ন ফর্ম পূরণের কাজেও সাহায্য করে থাকেন। এরজন্য নেন মোটে দশটা টাকা। তাছাড়া এমন কিছু বৃদ্ধরা আসেন ব্যাঙ্কে যাঁদের হয়ত হাতটা কাঁপছে অনবরত কিংবা পা টলমল। সেইসব মানুষের হয়ে লাইনেও দাঁড়িয়ে পড়েন প্রণবানন্দবাবু। অর্থাৎ ওই সইকেল স্ট্যান্ডের রোজগারেই চলে তাঁর রোজের সংসার। সেদিন ব্যাঙ্ক থেকে ফেরৎ এক ব্যক্তিকে প্রণবানন্দবাবু জিজ্ঞেস করেন “কাজ হয়েছে ব্যাঙ্কের?” ব্যক্তিটি খানিক মনমরা হয়েই জানান, “না হয়নি। এখন করোনার জন্য হবে না, পরে আসতে হবে”। এরপর সাইকেল স্ট্যান্ডের জন্য ভাড়া দিতে গেলে প্রণবানন্দবাবু বলেন, “যেদিন কাজ হবে সেদিন পয়সা দিও।”
কী অদ্ভুত মানসিকতা তাই না! আজকের দিনে যেখানে মানুষ অন্যের রোজগারে নজর দিয়ে বসে সেখানে এই মানুষটি নিজের পাওনাটাই নিতে অস্বীকার করেন। ব্যাঙ্ক থেকে আসা প্রত্যেককে একই প্রশ্ন করেন তিনি। আর কাজ না হলে ওই সাইকেল স্ট্যান্ডের ভাড়া আর চান না তিনি। বরং কেউ জোর করে দিতে চাইলেও নির্দ্বিধায় নাকচ করেন। এমনকি কোনো ব্যক্তি যদি তাঁর কাছে ওই ফর্ম পূরণ করান তবে সাইকেল স্ট্যান্ডের ভাড়াটিও অনায়াসেই ফ্রি করে থাকেন। কি ভাবতে অবাক লাগছে তো? সত্যিই এমন মানুষরা এই দুনিয়ায় রয়েছেন তাই তো পৃথিবী এখনও বাঁচার স্বপ্ন দেখে। মানবিকতা হয়ত এমন এক আদর্শ যার জন্য পুঁথিগত শিক্ষা বা উঁচু ডিগ্রী লাগে না। লাগে এক বড় মাপের মন। আর সেটাই প্রমাণ করলেন ওই সাইকেল স্ট্যান্ড মালিক প্রণবানন্দ বাবু।
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – জয়িতা সরকার
Discussion about this post