বিজয়া দশমীর মন খারাপ কাটতে না কাটতেই এসে হাজির একের পর এক উৎসব। দুর্গাপুজো, কালীপুজোর মতই আকর্ষণীয় বনেদি বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো। এমনই এক বনেদি পরিবার হল হাওড়ার সাঁতরাগাছি অঞ্চলের ‘ঘোষ’ পরিবার। তবে এলাকায় তোষ বাড়ি নামেই অধিক পরিচিত এই বাড়ি। প্রায় ১৪০ বছর ধরে এখানে ঐতিহ্য মেনে এবং সাড়ম্বরে পালিত হয়ে চলেছে জগদ্ধাত্রী পুজো। এ বাড়ির ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় যে, এলাকায় এই তোষ বাড়ির একসময় নামডাক ছিল বেজায়। এ বাড়ির প্রাণপুরুষ স্বর্গীয় আশুতোষ ঘোষ ছিলেন সে সময়ের সফল একজন চা-পাতা ব্যবসায়ী। গুণগত মানে সেরা এবং সুগন্ধী এই চা ব্রিটিশদের খুব পছন্দের ছিল। চায়ের নিলামে ‘আশুতোষ’ নামটিকে আরও একটু সহজ করে ডাকার সুবিধার্থে ইংরেজরাই এই ‘তোষ’ নামটির প্রবর্তন করেন। ‘A Tosh & CO.’ এই নামেই নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যান স্বর্গীয় আশুতোষ ঘোষের পুত্র শ্রী প্রভাস চন্দ্র ঘোষ।

প্রতি বছর জগদ্ধাত্রী পুজোর আগে বাড়ির দেওয়ালে নতুন রঙের প্রলেপ ও প্রবেশদ্বারে ঝোলানো বাহারি আলোর রোশনাইয়ে সেজে ওঠে তোষবাড়ি। এই পুজো কবে কার হাত দিয়ে শুরু হয়েছিল তা নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। তবে পরিবারের সদস্যরা মনে করেন যে স্বর্গীয় আশুতোষ ঘোষের মা চন্দ্রকামিনী দেবী প্রথম এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। প্রত্যেক বছর লক্ষ্মীপুজোর দিনে ঠাকুর দালানে কাঠামোপুজো ও মূর্তি গড়ার কাজ দিয়ে শুরু হয় পুজোর প্রস্তুতি। প্রসঙ্গত এক বৈশিষ্ট্য যা না বললেই নয় তা হল এই পরিবারে কাঠামোটি নানা সময় সংস্কার করা হলেও এই ১৪০ বছর ধরে রয়েছে অপরিবর্তিত। বিসর্জনের ১৫ দিন পর কাঠামোটি ধুয়ে আবার বাড়িতে নিয়ে আসা হয় পরের বছরের অপেক্ষায়।

মার্বেলের ঠাকুর দালানে অতিথি সমাগম এবং পরিবারের মহিলাদের ব্যস্ততা- এসব কিছুই জানান দেয় নবমীর অঞ্জলির শুভক্ষণ। বংশ পরম্পরায় বেশ কিছু প্রথা মেনেই সম্পন্ন হয়ে আসছে এ বাড়ির পুজো। যেমন স্থানীয় জয়চন্ডী মন্দিরে পুজো এবং প্রসাদ বিতরণ। প্রথা মেনে একই দিনে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর পুজো অনুষ্ঠিত হয়। আগে পশু বলি দেওয়া হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে নবমীর পুজোয় আখ, বাতাপি লেবু ও চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। বাদ যায় না কুমারী পুজো এবং ধুনো পোড়ানোর মত অন্যান্য মুখ্য উপাচারগুলিও। সারা বছর কর্মব্যস্ততায় থেকেও পুজোর ক’দিন পরিবারের সকলেই মিলেমিশে এক নির্ভেজাল আড্ডা ও আনন্দ-উন্মাদনায় মেতে ওঠেন। তারা মাতিয়ে রাখেন ১৪০ বছরের প্রাচীন তোষ বাড়ির বিখ্যাত দুর্গা দালানটিকেও।
Discussion about this post