রান্না হয় বাংলাদেশে, কিন্তু খেতে বসেন ভারতের মাটিতে। এমনকি ঘুমোতে যানও ভারতেই। হ্যাঁ, গল্প হলেও সত্যি! স্বাধীন ভূখন্ডের পরাধীন বাংলাদেশের যশোরের চৌগাছা উপজেলার সর্ব পশ্চিমের বয়রা বাওরের বাসিন্দা রেজাউল মন্ডল। বাড়ির উঠোনে ভারত-বাংলাদেশের শূন্য রেখা, রয়েছে সীমান্ত কাঁটাতার। তার একদিকে রান্নাঘর, আর অন্যদিকে চলে খাওয়া দাওয়ার পর্ব। উঠোনে কাঁটাতার না বসলেও বাইরে দিনরাত চলে বিএসএফ আর বিজিবির নজরদারি। এমনই এক অদ্ভুত বাড়ির বাসিন্দা তিনি।
বাংলাদেশ ও ভারতের স্বাধীনতার এত বছর পরও দুই দেশেরই বাসিন্দা হিসাবেই রয়ে গেলেন রেজাউল। সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় থাকার দরুন রেজাউল মন্ডলের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা ভারতের স্কুলে। এছাড়াও সংসারের চাল নুন থেকে মাছ মাংস বা সবজি কিনতে যেতে হয় ভারত ভূখন্ডের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদা ব্লকের বয়রা গ্রামে। অবশ্য দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের কাছে ৬৫ বছরের রেজাউল এবং তাঁর পরিবার পরিচিত এক অন্য নামে, ‘৩৯/১১ পিলারের বাসিন্দা’। কথা প্রসঙ্গে ‘ডেলি নিউজ রিল’কে রেজাউল মন্ডল জানান, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় বাড়ির উঠোনের মাঝ-বরাবর চলে গেছিল দুই দেশের রেখা। ফলে তাঁর বসতবাড়িটিও দেশ ভাগের মতো ভাগ হয়ে অর্ধেক পড়ে থাকে ভারতে আর অর্ধেক বাংলাদেশে। এক সময়ের ধনী ও সম্ভ্রান্ত পরিবারকে দেশ ভাগের সময় অনেক সম্পত্তি হারাতে হয়েছে। এখন সম্বল বলতে সীমান্তবর্তী ১৬ বিঘা জমি। যার ৭ বিঘা বাংলাদেশে আর ৯ বিঘা ভারতে। চাষের যা জমি রয়েছে, তারও অর্ধেক ভারতে এবং অর্ধেক বাংলাদেশে। আগে চাষের পর দুই দেশের অনুমতি নিয়ে সাড়ে ১০ মণ ধান ভারতে নিতে পারতেন। কিন্তু এখনকার নিয়মে বাংলাদেশের ফসল বাংলাদেশের বাজারেই বিক্রি করতে হয় তাঁকে। তবে সীমান্তরক্ষীদের অনুমতির সেই কাগজপত্র আজও সযত্নে রেখে দিয়েছেন তিনি।
রেজাউল আরও জানান, বাংলাদেশের আইনকানুন মেনেই নয় নম্বর স্বরূপদাহ ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত খাজনাও জমা দিতে হয় তাঁকে। একই সঙ্গে খাজনা দিতে হয় ভারতেও। তাঁর মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন যশোরে। এক ছেলে হাফিজুর কাজ করেন কলকাতা পুলিশে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদা ব্লকের বয়রা গ্রামে বাস করে প্রায় ৬০টি পরিবার। সবকটি বাড়িই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা। কিন্তু অর্ধেক ভারতে, অর্ধেক বাংলাদেশে অবস্থিত এমন বাড়ির বাসিন্দা একমাত্র রেজাউল মণ্ডলের পরিবারই। তাই আজও ভারত-বাংলাদেশ দু’দেশের মাটিতেই একই সঙ্গে পা পড়ে তাঁর। এভাবেই দুই দেশের মাটিকে আঁকড়ে ধরে দিনগুলি কেটে যাচ্ছে রেজাউল এবং তাঁর পরিবারের।
Discussion about this post