উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তথাকথিত ‘দরিদ্র’ দেশ হিসেবে পথচলা শুরু করে, আজ এশিয়ার প্রগতিশীল দেশ গুলির মধ্যে অন্যতম ‘ভারতবর্ষ’। স্বাধীনতা পরবর্তী ৭৫ বছরের ভারতের অক্লান্ত লড়াইয়ের গল্প অনুপ্রেরণার গোটা বিশ্বের কাছে। কৃষি কিংবা শিল্প উৎপাদনে অগ্রগতির পাশাপাশি, খেলাধুলাতেও উন্নতি ঘটিয়েছে ভারত। তবে সময়ের সাথে আলোচনার প্রসঙ্গ থেকে হারিয়ে বহু গেছেন ইতিহাস সৃষ্টিকারী খেলোয়ার। তাঁদেরই একজন টেকচাঁদ। ভারতীয় হকি জগতের উল্লেখযোগ্য এই খেলোয়াড় আজ দুর্বিসহ জীবন যন্ত্রণা ভোগ করে, মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন।
মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার বাসিন্দা টেকচাঁদ যাদব। হকির জাদুগর হিসাবে পরিচিত মেজর ধ্যানচাঁদের শিষ্য ছিলেন টেকচাঁদ। টেকচাঁদের আরো একটি পরিচয়, তিনি বিখ্যাত হকি প্লেয়ার মোহর-চাঁদের গুরু ছিলেন। সময়টা ১৯৬১ সাল। ইংরেজরা ভারত ছাড়ার দুই দশকও পার হয়নি। সেই সময় ভারতের জাতীয় হকি দল হল্যান্ডকে পরাজিত করে ইতিহাস রচনা করেছিল। এক নিমেষে ভারতীয় হকির খেলোয়াড়রা ভারতবাসীর কাছে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। হকির সেই সোনালি ফ্রেমের একজন উজ্জ্বল ছিলেন খেলোয়াড় টেকচাঁদ।
তারপর কেটে গেছে প্রায় ছয় দশক। টেকচাঁদের স্ত্রী মারা গেছেন বহুদিন আগেই। তার নেই কোনো সন্তানও। বছর বিরাশির বৃদ্ধ টেকচাঁদ আজ জীর্ণ এক কুঁড়েঘরে তার নিঃসঙ্গ জীবন অতিবাহিত করে চলেছেন। প্রতিদিনের দু-মুঠো খাবার জোগাড় করতেই হিমসিম অবস্থা তার। দুবেলা খাওয়ার জন্য পাড়া- প্রতিবেশীদের দুয়ারে দুয়ারে কড়া নেড়ে যান। কোনোদিন জোগাড় হয়, আবার কোনোদিন উপবাস করেই দিন কাটে তার। আক্ষেপের সুরে টেকচাঁদ জানান, “রয়েছে জবকার্ড। কিন্তু ৮২ বছরে অশক্ত শরীরে আর সঙ্গ দেয় না। আর এই বয়সে কে কাজ দেবে?”
বর্তমানে তার সম্বল কেবলমাত্র সরকারের দেওয়া মাসিক ৬০০ টাকা পেনশন। সংসারের খরচের পাশাপাশি শারীরিক অসুস্থতার জন্যে ওষুধের খরচ জোগাড়ের জন্য এই বয়সেও লড়ে চলেছেন তিনি। টেকচাঁদের প্রতিবেশীদের মতে, “বিধায়ক, সাংসদেরা জীবনভর পেনশন পান।। অথচ, ইতিহাস সৃষ্টিকারী একজন খেলোয়াড়ের আজ এই কঠিন পরিস্থিতির শিকার। দুমুঠো খাবারও যাঁর কাছে অনিয়মিত। এই বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ প্রয়োজন।”
Discussion about this post