বসন্তোৎসবের কথা উঠলেই চোখের সামনে যে উৎসবের ছবি ভেসে ওঠে তা হল শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব। দোল বা বসন্ত উৎসব মানেই হাজার হাজার বাঙালির ঠিকানা শান্তিনিকেতন। কৃষ্ণচূড়া, পলাশের সমারোহে, রং আর আবিরে রঙিন হয়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন।
শান্তিনিকেতনে দোল পূর্ণিমা তিথিতে যে উৎসব হয় তা কিন্তু দোল উৎসব নয়, বসন্তোৎসব। দোলযাত্রা তিথি-নক্ষত্র মেনে হলেও বসন্তোৎসবের সেরকম কোনও রীতি নেই। দোল একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের পালিত উৎসব, যার সঙ্গে প্রচলিত আছে রাধাকৃষ্ণের মিথ। শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে কখন রঙের উৎসব চালু করেছিলেন, তা নিয়ে হয়ত বিতর্কের শেষ নেই। তবে শান্তিনিকেতনে যে বসন্ত উৎসব চালু করেন রবীন্দ্রনাথের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। ইতিহাস বলছে, শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৭ সালে ঋতুরঙ্গ উৎসব শুরু করেন। ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানাতেই মূলতঃ এই উৎসবের জন্ম। প্রথমে বসন্তের যে কোনও দিন অনুষ্ঠিত হলেও, পরের দিকে শুধুমাত্র বসন্ত-পূর্ণিমার দিনেই হত এই উৎসব। ১৯৩২ সাল থেকে (মতান্তরে ১৯২৫) এই উৎসব ‘বসন্ত উৎসব’ নামেই পরিচিত হয়।
কালক্রমে এই উৎসব যে কীভাবে দোলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেল তা আজ আর জানা যায় না। যদিও তবে এটি ঘটে কবির মৃত্যুর পর। বসন্ত উৎসবের প্রথম দিন থেকেই দেশ-বিদেশের নানা অতিথির পাশাপাশি সামিল করা হতো স্থানীয় আদিবাসীদেরও। সেই প্রথা আজও অমলিন। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনকে সমগ্র দেশবাসীর কাছে উৎসর্গ করেন, তাই শান্তিনিকেতনে সবার অধিকার। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে এক নিবিড় আত্মীয়তায় জুড়ে গেছেন সকলেই। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে অনুষ্ঠিত বসন্তোৎসব নিছকই নাচ-গান-নৃত্য নাট্য আর আবির খেলার উৎসবে আটকে নেই। বরং তা আজ প্রকৃতির সঙ্গে সবার রঙেই রঙ মেশানোর উৎসব।
চিত্র ঋণ – গৌর মালাকার
Discussion about this post