ঢাকে কাঠি পড়ল বলে। একবছরের অপেক্ষার পর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ প্রায় হাজির। বৃষ্টির চোখরাঙানি থাকলেও ঠাকুর দেখা কি আর বন্ধ হয়! তাই গোটা বঙ্গ যেন সাজগোজে ব্যস্ত। ঠিক একই ছবি হাওড়ার আমতায় রসপুরের রায় বাড়িতে। রসপুরের রায় বাড়ির পুজোর বয়স নয় নয় করে প্রায় ৫০০ বছর। জনশ্রুতি অনুযায়ী, ১৫৪৫ সালে রসপুরে দুর্গাপুজো শুরু করেন যশশচন্দ্র রায়। মৃত্যুর বহু বছর পর তাঁর বংশধরেরা সাতটি ঘরে ভাগ হয়ে গেলেও সবাই মিলে দুর্গাপুজোর ব্যয়ভার বহন করে থাকে। তাই এই পুজো সাতঘরের পুজো নামে পরিচিত।
স্থানীয়দের কথায় এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট হল, দেবীর ডানপাশে উপরে থাকেন সিদ্ধিদাতা গণেশ এবং গণেশের পায়ের নীচে দেবী লক্ষ্মী। বাঁ পাশে ওপরে দেব সেনাপতি কার্তিক, নীচে দেবী সরস্বতী। জন্মাষ্টমীর দিন রায়বাড়ির একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে মাটি তোলার পর প্রতিমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। আগে নারিট রাজবাড়ির তোপধ্বনি শুনে রসপুর রায় পরিবারের সন্ধিপুজো শুরু হতো। এখন সময়ের সাথে সাথে কমেছে জৌলুস, নিয়মকানুনে এসেছে অনেক পরিবর্তন। এখন রায়বংশের সদস্যরা দামোদরের তীরে উপস্থিত হয়ে নির্দিষ্ট সময়ে সমবেত কণ্ঠে ডাক দিলে সন্ধিপুজো শুরু হয়। সন্ধিপুজোর শেষে বাড়ির বউদের নিয়ে শুরু হয় ধুনোপোড়া অনুষ্ঠান। নবমীর সন্ধ্যায় এক ফুটের মত একটি বাঁশের নৌকা করে তাতে ফুল, ফল ও মিষ্টি দিয়ে দেবীর সামনে নৌকা পুজো হয়। পুজোর পর মধ্যরাতে মহিলারা শঙ্খধ্বনীর মাধ্যমে সেই নৌকাটিকে ঘরে নিয়ে যান। প্রথাটির নাম বুহিততোলা। যদিও দশমীতে আজও প্রথা মেনে মায়ের বিসর্জন হয় দামোদর নদেই।
গ্রামবাংলার সাবেকিয়ানা ও আভিজাত্যের সাক্ষ্য বহন করে আছে রসপুরের রায় বাড়ির দুর্গা। তাদের নিয়মনীতির ছোটখাটো বদল ঘটলেও রসপুর গ্রামে কানপাতলেই শোনা যাবে এই পুজোর কাহিনী। লৌকিকতা ও অলৌকিকতার মেলবন্ধনে এই পুজো যেন একপ্রকার নিজেই আঞ্চলিক ইতিহাসে সামিল।
চিত্র ঋণ – নান্দীক মুখার্জী
Discussion about this post