‘চিয়ার্স’! শব্দটি আখছার বলে থাকি আমরা। জমাটি আড্ডা অথবা পার্টি, যে কোনও আনন্দ উৎসব বা পাতি মদ্যপান সবেতেই গ্লাসে গ্লাস ঠুকে সমবেত উল্লাস প্রকাশ প্রথমেই শুরু হয় চিয়ার্স দিয়ে। কিন্তু এখন এই শব্দ কেবল আনন্দ প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হলেও ইতিহাসে এই প্রথার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জটিল রাজনীতি এবং কূটনীতি। এই প্রথার প্রথম প্রচলন হয় ইউরোপে। ইউরোপের যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে, অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে নিকট আত্মীয়কেও বিশ্বাস করে ঠকতে হয়েছে বহু মানুষকে। প্রতিনিয়তই চলত ক্ষমতা দখলের লড়াই, অধিকার দখলের লড়াই। আর তাই স্বার্থসিদ্ধির জন্য স্বজনহত্যাও হয়ে উঠেছিল সাধারণ বিষয়।
ইউরোপে মদ্যপান নিয়ে আমাদের দেশের মত নাক সিঁটকানোর চল নেই। বরং উৎসব অনুষ্ঠান একান্ত বৈঠকে চা কফির মতোই থাকত পানীয়ের ব্যবস্থা। কিন্তু সন্দেহের আবহে এই অনুষ্ঠানগুলিকেই সু্যোগ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইত সুবিধাবাদীরা। শত্রুর পানীয়ের গ্লাসে মিশিয়ে দিত বিষ। আর কারোর গ্লাসে বিষ আছে কিনা তা পরখ করতেই শুরু হয় এই প্রথা। পানীয়ের গ্লাস ঠোকাঠুকি করতেই এই গ্লাসের পানীয় চলকে পড়ে মিশে যেত অন্য গ্লাসে আর এর থেকেই প্রমাণ হয়ে যেত দুই পক্ষের পানীয়ই পানের জন্য নিরাপদ কিনা।
এতো গেল ইতিহাস কিন্তু এর পেছনে বৈজ্ঞানিক যুক্তিও খাড়া করেছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালকোহল বিশেষত ওয়াইন তখনই সব থেকে বেশি উপভোগ করা যায়, যখন সব ইন্দ্রিয়গুলি একসাথে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে, গ্লাসে গ্লাস ঠুকতেই একটা স্বাভাবিক শব্দ তৈরি হয়, হালকা কম্পনে চলকে ওঠে পানীয়। এর ফলে একসঙ্গে যে কোনও ব্যক্তির কান, চোখ এবং ত্বকের মত ইন্দ্রিয়গুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর সেই পানীয় যখন মুখের মধ্যে আস্তে আস্তে প্রবেশ করে, জিভ তার স্বাদ নেয়, নাক নেয় গন্ধ। তাই আরও সুখকর হয় মদ্যপান, আর এর গোড়াতে থাকে সেই ‘চিয়ার্স’ই।
Discussion about this post