শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, কে সি পালই ভরসা! বিগত ৭৮ বছর ধরে বাঙালির ভরসা সেই কে সি পালের ছাতা। সেই ১৯৪২ সালে প্রথম শুরু হয় এই ছাতার ব্যবসা। তারপর থেকে আজ ২০২০ সালে দাঁড়িয়েও কে সি পালের ছাতার চাহিদা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। সত্যিই তো, কড়া রোদ হোক বা ঝমঝমে বৃষ্টি, সঙ্গে যদি থাকে কে সি পালের ছাতা তাহলে আর চিন্তা কিসের। চোখ বুজে বিশ্বাস করা যায় যাকে, এ ছাতা সঙ্গে থাকলেই কেল্লাফতে। এমনটাই এর ব্র্যান্ড ভ্যালু। তবে শুরুটা কিন্তু এত সহজ ছিল না। নিতান্তই এক অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে এই ব্যবসার গোড়াপত্তন। এবং ছাপোষা এক বাঙালির হাত ধরেই। সেই কাহিনীই আজ শোনানো যাক।
সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। জাপানিদের ভয়ে ব্রিটিশ বাহিনীর তখন হিমশিম অবস্থা। কলকাতায় তখন ব্রিটিশরাজ। তবে জাপান আতঙ্কে অনেকেই তখন পাততাড়ি গোটচ্ছেন। কলকাতা ছেড়ে পালাচ্ছেনও বহু মানুষ। বাবা তুলসীদাসের রমরমা ছাতার ব্যবসা। নিত্য নতুন ছাতা বানাতেন তিনি। পসারও ছিল বেশ। সেই ছাতার ব্যবসা ফেলে যেতে সায় দিল না ছেলে কার্তিক চন্দ্র পালের। বাবার সেই ব্যবসাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে বড়বাজারে তিনি খুলে ফেললেন প্রথম ছাতার দোকান। শুরুতে লাভের মুখ না দেখলেও ধীরে ধীরে পসার জমতে লাগল। ১৯৪৭ সালে মারা গেলেন বাবা তুলসীদাস। তারপর নিজের হাতে একাই সামলাতে লাগলেন ব্যবসা। বেড়ে উঠতে লাগল চাহিদাও। এরপর দাদু, বাবা, কাকার মৃত্যুর পর এখন নাতির হাতে ব্যবসার হাল। তবে আগেকার সেই চাহিদা বা ব্র্যান্ড ভ্যালু কিন্তু এখনও অটুট।
কে সি পালের ছাতার অন্যতম ‘ইউএসপি’ এর গুণগত মান। যেমন টেকসই তেমনই সুরক্ষিতও বটে। ফলে ব্যবসাও চলছে রমরমিয়ে। বাড়ছে শাখাও। পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই এমনকি উড়িষ্যা, বিহার এবং ত্রিপুরার সীমাও ছাড়িয়ে চলেছে এই ছাতার ব্যবসা। আগামী দিনে হয়তো সারা ভারত জুড়েই রাজত্ব করবে এক বাঙালির নিজে হাতে গড়ে তোলা এই ছাতার ব্যবসা। হয়তো একদিন ভারতের সবার হাতে হাতে ঘুরবে কে সি পালের ছাতা! কে বলতে পারে!
Discussion about this post