সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নানা পরিবর্তন এসেছে মানুষের জীবন যাপনে। যোগ্যতমের উদবর্তন নিয়ম মেনেই আমরা সামিল হয়েছি ইঁদুর-দৌড়ে। তাতে জীবনযাত্রার মান হয়েছে উন্নত, কিন্তু আলগা হয়েছে সম্পর্কের বাঁধন। যৌথ পরিবারের দিন আজ অতীত। আজকের যুগে ‘ব্রাইট ফিউচার’ বানানোর চাপে দাদু-ঠাম্মিদের ছত্রছায়ায় নাতি-নাতনিদের বেড়ে ওঠা প্রায় অলীক কল্পনা। শেষ জীবনে বয়ঃজ্যেষ্ঠ মানুষগুলোর একমাত্র সঙ্গী হয়ে রয়ে যায় কেবল একাকীত্ব। এই পরিস্থিতিতেই মুশকিল আসান হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে কিছু সংস্থা। অর্থের বিনিময়ে এবার নাতি-নাতনী ‘ভাড়া’ করার সুযোগ দিচ্ছে তারা!
২০১১ সালের জনগণনার নিরিখে এই মুহূর্তে দেশে ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই নিঃসঙ্গ। তাই সম্প্রতি ভারতের বেশ কিছু সংস্থা বয়স্কদের নিঃসঙ্গতা ঘোচাতে অভিনব এই পন্থার উদ্ভব ঘটিয়েছেন। অর্থের বিনিময়ে এই সংস্থাগুলি অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের পাঠাবে প্রৌঢ়-প্রৌঢ়াদের কাছে। চাহিদা অনুযায়ী সপ্তাহে বারকয়েক এসে ঘুরে যাবে তারা। কখনও হয়তো তাঁদের দেখাশোনা করবে। কখনও বা বই পড়ে শোনাবে। আবদার করলে টুকটাক বাইরে বেড়াতেও নিয়ে যাবে। আর কিছু না হলে স্রেফ পাশে বসে গল্প-গুজবই না হয় করবে! মোট কথা, নিঃসঙ্গতার দীর্ঘ প্রহরগুলি তারা ভরিয়ে তুলবে নিজেদের উপস্থিতিতে!
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে ভারতে এই কাজে জড়িত সংস্থা পাঁচটি। তবে সংখ্যাটা যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। স্পষ্টতই, বয়স্কদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ছে। নিঃসঙ্গতার থাবা এতটাই প্রবল, যে রক্ষা পেতে অচেনা কাউকে ভরসা করতেও দ্বিধাবোধ করছেন না তাঁরা। তবে এর জন্য ঘণ্টা প্রতি তাঁদের গুনতে হচ্ছে ১৫০ টাকা। মাসিক হিসেবে তা দাঁড়ায় ২০,০০০ টাকা। বেশিরভাগ কলেজে পড়া ছাত্র-ছাত্রীরাই হাতখরচ চালাতে বেছে নিচ্ছেন এই পেশা। পড়ুয়াদের পাশাপাশি অন্যান্য মানুষও রয়েছেন। যাঁর যেমনটি পছন্দ, সেই অনুযায়ীই নাতি-নাতনী পাঠায় সংস্থাগুলি!
গুরুজনেরা বলেন, রক্তের টান নাকি কোনো কিছুতেই পূরণ হয় না! কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ক্রমেই বদলাচ্ছে সেই ধারণা। যে ভালোবাসা পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্য, তার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পরিবারের মহীরুহরাই। তাই অর্থের বিনিময়েও সেই বঞ্চনা কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া গেলে মন্দ কী! তাঁরাই যে এককালে আমাদের শিখিয়েছেন, বাস্তবের থেকে কঠোর আর কিছু নেই!
Discussion about this post