হাল আমলে আধুনিকতার চল হিসাবে চালু হয়েছে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার হিড়িক। স্বাভাবিকভাবেই ব্যতিক্রম নয় কাঁচরাপাড়াও। এরই সঙ্গে অধিপত্য কায়েম হয়েছে হিন্দি ভাষারও। ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা আগেও বেশ জোরদার ছিল, বিশেষত উচ্চশ্রেণীর মধ্যে। তবে বিগত এক দশকের হিসেবে দেখা যাচ্ছে ইংরেজি মাধ্যমে সন্তানকে শিক্ষাদানের চলটা মধ্যবিত্ত বাঙালিরাও বেশ রপ্ত করেছে। সেখানে তারা সন্তানদের দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে প্রাধান্য দিচ্ছেন হিন্দিকেই।
এলাকাবাসীদের থেকে জানা যাচ্ছে যে, কাঁচরাপাড়া সংলগ্ন এলাকায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোয় প্রথম ভাষা ইংরেজি হবে তা স্বাভাবিক, কিন্তু দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দিকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে (এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় ব্যতিক্রম)। এমন নয় যে শুধুমাত্র হিন্দিভাষী মা-বাবারাই সন্তানদের সুবিধার্থে হিন্দি পড়াচ্ছেন। এমনকি কিছু বাঙালি অভিভাবকরাও তাদের সন্তানের জন্য দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দিকে বেছে নিয়েছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের মতে বিভিন্ন শ্রেণীতেই নাকি দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় ভাষার ক্ষেত্রে হিন্দি বেশি প্রচলিত। বাংলার ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দিন দিন কমেই যাচ্ছে। ফলস্বরূপ যারা ওই সমস্ত স্কুলগুলিতে বাংলা বিষয়টি পড়ানোর জন্য আবেদন করছেন তাদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। একইভাবে যারা বাংলা মাধ্যম থেকে পড়েছেন বা বাংলাতে স্নাতক তারাও এই সকল স্কুলে পড়ানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সুযোগ পাচ্ছেন হিন্দিতে স্নাতকরা।
এরই পাশাপাশি বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিও ক্রমশই তাদের মর্যাদা হারাচ্ছে। টিকিয়ে উঠতে পারছেনা সমাজ চলতি ইংরেজি মাধ্যম ও হিন্দিভাষার সাথে। তবে হিন্দিকে বেছে নেওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে অভিভাবকদের যুক্তি বেশ সরল এবং জোরালোও বটে। তাদের মতে এসবই নিজের সন্তানদের বাজারের উপযোগী করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা। বর্তমান সময়ে দাড়িয়ে এই রাজ্যে থেকে চাকরি পাওয়াটা প্রায় এক অসাধ্যকর বিষয় বললেই চলে। তাই যাতে তারা অন্তত ভবিষ্যতে অন্য রাজ্যে গিয়ে নিজের মনের মতো মোটা মাইনের চাকরি পায় তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া। দিনের শেষে যাতে সমাজে মর্যাদার সাথে মাথা উচু করে চলতে পারে তাদের ছেলেমেয়েরা এটাই তাদের ইচ্ছে। অন্যদিকে কাঁচরাপাড়া রেলওয়ে ওয়ার্কশপে বাঙালিদের চাকরি কম পাওয়ার ক্ষেত্রেও বহিরাগত রাজ্যের মানুষদের দায়ী করা হচ্ছে। প্রাক্তনদের মতে বিহার থেকে অতি পরিমাণে কর্মচারী এখানে এসে কাজে ঢোকায় বাঙালিরা সুযোগ হারাচ্ছে। বিহারী ছাত্রছাত্রীদের জন্যই বিভিন্ন স্কুলে হিন্দির প্রাধান্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ভবিষ্যতে বাংলার গুরুত্ব ও আভিজাত্য আবার যাতে আগের মতই ফিরে আসে ও বাংলাভাষা সেই মর্যাদা ফিরে পায় সেই বিষয়ে শিক্ষাপরিষদ বিশেষ নজরদারি রাখার চেষ্টা করছে।
Discussion about this post