আফ্রিকার ঐতিহাসিক স্মৃতিসমৃদ্ধ অঞ্চল মানেই মিশর। তার ওই গম্বুজাকৃতি পিরামিড কিংবা সাদা কাপড়ে মোড়া মমি সবের মধ্যেই কেমন এক রহস্যের ছাপ। আর তার চেয়েও আকর্ষণীয় হল নীলচোখা সোনালী মুকুটের ওই ফ্যারাও। আজ তবে বিশেষ এক ফ্যারাও এর জীবনরূপের পর্যালোচনা হোক।
যিনি নারী হয়েও পুরুষতান্ত্রিকতার ঊর্ধ্বে গিয়ে রাজসিংহাসনেও নিজের জায়গা আদায় করে নিয়েছেন। তবে মিশরে রাজ্যপাট সামলানোর দায়ভার সবসময়ই পুরুষের কপালে প্রাপ্তি। কিন্তু তিনি শুধুই পুরুষের হুকুম তামিল করতে জন্মাননি। তিনি হলেন মিশরের অন্যতম নারী ফ্যারাও হাতশেপসুত। রাজা প্রথম থুতমোস এবং তার প্রধান স্ত্রী রানী আহমোসের কন্যা হাতশেপসুত। থুতমোসের মৃত্যুর পর সাম্রাজ্যের মানুষ পড়ল এক দ্বন্দ্বে। বয়সে বড় হলেও হাতশেপসুত এক মহিলা। তাই তাকে সিংহাসনের প্রধান হিসেবে কিছুতেই মানবে না মিশরবাসী। তাই অযোগ্য হয়েও সৎভাই দ্বিতীয় থুতমোস হলেন রাজা। এই প্রসঙ্গে বলা ভালো, তৎকালীন মিশরের রাজপরিবারে একটি প্রথা প্রচলিত ছিল। তা হল ভাই-বোনের বিয়ে। বাইরের সাধারণ রক্তকে রাজরক্তে মিশতে দেওয়া অগ্রাহ্য ছিল। সেই প্রথার শরিক হয়েই দ্বিতীয় থুতমোস ও হাতশেপসুর গাঁটছড়া বাঁধেন। কিন্তু কিছু বছর পর আবার দ্বিতীয় থুতমোসেরও মৃত্যু হয়। সমস্যাটা ঘুরে ফিরে সেই এক জায়গায়।
আত্মবিশ্বাসের গর্জনে সিংহাসনে উত্তীর্ন হলেন হাতশেপসুত। তিনি যেমন ছিলেন সুন্দরী তেমনি মাথায় বুদ্ধির ভান্ডার। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন নারীর বেশে নয় পুরুষ বেশেই রাজ্যচালনা করবেন। সভায় সর্বদা তাঁকে পুরুষ রূপেই দেখা গিয়েছে। এমনকি নকল গোঁফ দাড়িও ব্যবহার করতেন। কর্মদক্ষতা ও রাজনৈতিক সাফল্যকে চরম পর্যায়ে নিয়ে যান একহাতে। রাজকীয় স্থাপত্য, সমাধি, মন্দির তৈরী। অসংখ্য নতুন মন্দির, ভাস্কর্য, ওবেলিস্কও (লম্বা দৈত্যাকৃতির মূর্তি) কি নির্মাণ করেননি! তবুও সে তো নারীই। তাই দ্বিতীয় থুতমোসের দ্বিতীয় স্ত্রীর পুত্র তৃতীয় থুতমোস জন্ম নিলেই মিশরবাসী রাজা হিসেবে ছোট্ট ভাবি রাজাকেই সিংহাসনে দাবি করে। কিন্তু সে দাবি না মেনেই বাইশটা বছর ওই ছদ্মরূপেই শাসন করেন হাতশেপসুত। যদিও হাতশেপসুতের মৃত্যুর পর তৃতীয় থুতমোস তাঁর কীর্তিগুলো একে একে সরিয়ে ফেলেন। বাকি যা কিছু তা নিজের নামেই প্রচার করেন। নারী ফ্যারাও বলেই হয়ত হাতশেপসুতের গুণ, কর্মদক্ষতা, জ্ঞান এত সহজে চাপা পড়েছে। ইতিহাসের পাতায়ও স্থান পেয়ে উঠতে পারেননি সেভাবে। তবে উনিশ শতকে বিখ্যাত ইজিপ্টোলজি এবং হায়ারোগ্লিফিক কোডার জন ফ্রান্সিস শ্যাম্পলিয়ন হাতশেপসুতের নাম পুনরায় ইতিহাসের পাতায় ফিরিয়ে আনেন।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – গল্পকুটির
Discussion about this post