সপ্তদশ শতকের শুরুর দিকে সংবাদপত্রের সূচনা ঘটে। এর পূর্বে সংক্ষিপ্ত সরকারী ঘোষণা বা ইস্তেহার এবং রাজার আজ্ঞা প্রধান প্রধান নগরগুলোতে প্রকাশিত হতো। প্রথম লিখিতভাবে সংবাদ বা খবরের ব্যবহার মিশরে সু-সংগঠিতভাবে প্রবর্তন হয়েছিল। খ্রীষ্ট-পূর্ব ২৪০০ বছর পূর্বে ফারাও শাসন আমলে বর্তমানকালের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম কুরিয়ার সার্ভিসের আদলে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রসারনের উদ্দেশ্যে ডিক্রি বা আদেশনামা প্রচারের ব্যবস্থা করা হতো। আর সেই সময় থেকে ঘটেছে নানা বিবর্তন। সাংবাদিকতা শব্দটির সাথে সাহসিকতা, সততা আর নিরপেক্ষতা অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। আর ব্রিটিশ আমলে সাংবাদিক হিসেবে যে কত বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তবে সেই সময় এক বাঙালি সাংবাদিক তার সততা ও সাহসিকতায় নাজেহাল করে ছেড়েছিলেন ব্রিটিশ মহলকেও। আসুন আজ তারই গল্প পড়ি।
উনিশ শতকে বাংলা থেকে প্রকাশিত যেসব পত্রপত্রিকায় সমকালীন সমাজের প্রতিফলন ঘটেছে, সেগুলির মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য হলো হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা। এটি ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রকাশিত হয়। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় হলেন প্রথম ভারতীয় সাংবাদিক, যিনি এই দাবি তোলেন যে ভারতবর্ষীয় সমস্ত সমস্যার সমাধান ভারতবাসীকেই করতে হবে। তিনি দাবি করেন যে, ভারতে এখনই স্বায়ত্তশাসন চালু করা দরকার। কলকাতা তখন ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল। কলকাতা থেকেই প্রকাশিত হত তাঁর ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’ সংবাদপত্র। তিনি এই সংবাদপত্র সম্পাদনা করেছেন ১৮৫৬ থেকে ১৮৬১ সাল পর্যন্ত। হরিশচন্দ্রের মতামতকে তখন বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিতেন ব্রিটিশ শাসকরা। গোটা দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা যখন নীল বিদ্রোহের বিরুদ্ধে, ঠিক তখনই তিনি নীলচাষীদের স্বপক্ষে কলম ধরেন। এছাড়াও নারী শিক্ষা, বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে প্রচার চালান। সীমাহীন পরিশ্রমের ফলে তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। ১৮৬১ সালে মাত্র ৩৭বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
হরিশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় দেশ কল্যাণের কাজে হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকাকে হাতিয়ার করেছিলেন। বাঙালিকে শিখিয়েছিলেন নির্ভিক সাংবাদিকতার পাঠ। শেষ মুহূর্তেও জ্বরের ঘোরে তার দায়িত্বপূর্ণ উক্তি ছিল, “ওরে পেট্রিয়ট মেশিনে ওঠাসনে, প্রুফটা আর একবার আমাকে দিয়ে দেখিয়ে তবে ছাপিস।”
Discussion about this post