পশ্চিমবঙ্গ, ভারতীয় প্রাচীন সংস্কৃতির পীঠস্থান। পর্যটকের বর্ণনা, লিপিমালা, সাহিত্য, পাণ্ডুলিপি চিত্র, পোড়ামাটির ফলকচিত্র থেকে প্রাচীন বাংলার স্থাপত্যশৈলীর গৌরবময় ইতিহাসের সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। আজও বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে বহু প্রাচীন উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য। প্রাচীন এই স্থাপত্যেগুলির মধ্যে অন্যতম কাঠের ঝুলন্ত সেতু। কয়েক শতাব্দী পার করে আজও ডাচ সংস্কৃতির অন্যতম বাহক এই সেতুটি।
হাওড়া কাটোয়া ট্রেন লাইনের অন্যতম স্টেশন কুন্তীঘাটে অবস্থিত এই সেতুটি। কুন্তীঘাট রেল স্টেশন নেমে, সেখান থেকে মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথে পৌঁছে যাওয়া যায় এই সেতুতে। কুন্তীঘাট ও ঘোষালিয়া গ্রামের মাঝে কুন্তী নদীর ওপর এই ঝুলন্ত কাঠের ব্রিজটি অবস্থিত। জানা যায়, ডাচ শাসন কালে মানুষের সুবিধার জন্য হুগলির জেলা জজ ড্যানিয়েল স্মিথের চেষ্টায় কুন্তী নদীর উপর এই সেতুটি নির্মিত হয়। সেতুটি তৈরি করতে অর্থ সাহায্য করেছিলেন ভাস্তারার জমিদার ছকুরাম সিংহ।
কাঠের তৈরি এই সেতুটি কুন্তীঘাট সহ আশেপাশের বহু মানুষের কাছে এক অন্যতম আকর্ষণের জায়গা। কুন্তী নদীর উপর নির্মিত কাঠের এই সেতুটি প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন। বর্ষায় কুন্তী নদী বেশ খরস্রোতা থাকে। কুন্তী নদীর উপর নির্ভরশীল আশেপাশের বহু পরিবার। মাছের সন্ধানে নদীর বুকে বয়ে চলে বহু নৌকা। সেই নৌকায় চেপে নদী ভ্রমণের সুবিধা ও আছে এখানে। প্রাচীন এই সেতুটি বর্তমানেও বেশ ব্যস্ত। তবে খুব ভারী যানবাহন এই সেতুর উপরদিয়ে চলাচল করে না।
সময়ের সাথে বেশ কিছু স্থাপত্য ধ্বংসাবশেষে পরিণত হলেও আজও দৃঢ়তার সাথে নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে প্রাচীন এই সেতুটি। প্রশাসনিক সহায়তায় মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণের ফলে নতুনভাবে সেজে উঠছে সেতুটি। নদীর পার বরাবর সবুজ গ্রাম , চাষ-আবাদ, প্রচুর পুকুর , বিল সেতুটির সৌন্দর্য যেন কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। বিকেলের আলোয় কিংবা বৃষ্টি ভেজা কোন দিনে গ্রাম্য পরিবেশে কুন্তী নদীর উপর এই সেতু বড় মনোরম। সময় বের করে একবার ঘুরে আসতেই পারেন, সাক্ষী হবেন এক অসাধারণ অনুভূতির।
চিত্র ঋণ – অমিত মিত্র
Discussion about this post