হাট বসেছে শুক্রবারে কিন্তু বকশীগঞ্জে বা পদ্মা পারে নয়। কেলেঘাই নদীর পারে বসা এ এমন এক হাট যেখানে বসে মাদুরের মেলা। মাদুর জিনিসটা আমাদের কাছে বেশ একটা নস্টালজিয়ার ব্যাপার। মোহিনী হাট নামে পরিচিত এই হাটে মাদুরের কেনা বেচা দেখলে চমকে যাবে যে কেউ!
কেলেঘাই হলো কংসাবতী নদীর ডানতীরে অবস্থিত একটি শাখা নদী। নাতি দীর্ঘ এই নদীর উৎপত্তি ঝাড়গ্রাম থেকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের কাছে এই নদীর ধারকেই কেন্দ্র করে একটা বিরাট মেলার হাট বসে। সবং বিখ্যাত তার হাতে তৈরি মাদুরের জন্য। শহরে মাদুরের চাহিদা তেমন না হলেও গ্রামে এর মূল্য আগের মতোই রয়েছে। ফলে আসে পাশের বহু গ্রাম থেকে মানুষের ঢল নামে এই হাটে মাদুর কেনা বেচার জন্য। সবংয়ের মানুষদের প্রধান জীবিকা এই মাদুর। খুব ভোরে এই হাট বসে। তবে মোহিনী হাটে মাদুরের পাশাপাশিই সবজির দোকান পাটও বসে অনেক। কেলেঘাই নদীতে প্রত্যেক বছর বর্ষার সময় বেশ অনেক জল ওঠে। ফলে সবজির ফলন হয় খুব ভালো। ভোরের বেলায় একদম টাটকা তাজা খেতে মজা সবজি আনন্দ ওঠাতে প্রচুর মানুষ সবজি কিনতেও আসেন। নদীর ধারে সকাল বেলায় চাঁদের হাট দেখলে অনেকেই অবাক হবেন। বিশেষ করে এতো বহুল সংখ্যক মানুষ যে মাদুরের টানে এখানে আসে তা একটি বিশেষ আকর্ষণ। প্রতি একটি মাদুরের দাম প্রায় ১০০ টাকা করে পড়ে।
শহরের দিকে মাদুরের ব্যবহার কমেই গেছে বললে চলে। কিন্তু মোহিনী হাটে এতো কেনা বেচা দেখলে অবাক লাগবে। জেনে রাখা ভালো পশ্চিম মেদিনীপুর তথা পশ্চিম বাংলার পুরো অংশই তো শহরাঞ্চল নয়। প্রচুর গ্রাম জুড়েই তৈরি আস্ত পশ্চিমবঙ্গ। তাই মাদুরের চাহিদা কমলেও ফুরিয়ে যায়নি। আমাদের বড় হয়ে ওঠার বেশ অনেকটা জায়গা জুড়েই এই জিনিসটার নস্টালজিয়া। সে শীতের মিঠে রোদে ছাদে বসে বই পড়া হোক বা লোডশেডিংয়ে খাটিয়ায় মাদুর পেতে বসে ভূতের গপ্পো শোনা। বহু মানুষের একটি বড় কর্মসংস্থান এই মাদুর শিল্পকে ঘিরে। বেঁচে থাকুক এই শিল্প আরও হাজার বছর ধরে। বেঁচে থাকুক আমাদের নস্টালজিয়া।
Discussion about this post