ফুটবল, শুধু এক খেলা নয়, এ যেন এক সাগর সমান আবেগ। ফুটবল বিশ্বকাপ, ফুটবলের এক মহা উৎসব। সারাবিশ্বের প্রতিটি কোণার ফুটবল প্রেমীরা অপেক্ষা করে থাকেন বিশ্বকাপের। কেউবা ব্রাজিল, কেউ পর্তুগাল, আবার কেউ আর্জেন্টিনার জন্য গলা ফাটান। তবে তার মাঝেও এবছরে নিজের অসামান্য ফুটবল প্রতিভায়, সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছে মরক্কো। তবে মরক্কোর এই সাফল্যের পেছনে যার অবদান অস্বীকার করা অসম্ভব, তিনি হলেন মরক্কোর সহ অধিনায়ক হাকিম জিয়েশ। সারা বিশ্বের কাছে যিনি পরিচিত মরক্কান ‘Wizard’ নামে।
জীবনের খারাপ সময়গুলোতে না ভয় পেয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করেই আজ তিনি আজ ‘মরক্কোর মহানায়ক’। ফুটবলে মরক্কোর হয়ে প্রতিনিধিত্ব করলেও হাকিম জিয়েশের জন্ম হয় নেদারল্যান্ডসে। মরক্কান মা ও ডাচ বাবার ঘরে তিনি ছিলেন অষ্টম সন্তান। মাত্র ৫ বছর বয়সেই ড্রন্টন শহরে তার বড় ভাই ফাউজির সাথে স্ট্রিট ফুটবল খেলার মধ্যে দিয়েই জিয়েশ এর ফুটবল এর প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। অর্থিকভাবে তারা দুর্বল হলেও, ভাই-বোন দের সাথে নির্বিঘ্নেই দিনকাল কাঠাচ্ছিলো জিয়েশ। তবে মাত্র দশ বছর বয়সেই জিয়েশ তার বাবাকে হারান। আর্থিকভাবে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েন জিয়েশের পরিবার। আট সন্তান নিয়ে কিভাবে সংসার চালাবেন এই ভেবেই বিচলিত হয়ে পড়েন জিয়েশের মা। পরিবারের এই অভাব দেখেই হাকিম জিয়েশ সিদ্ধান্ত নেন তিনি একজন প্রফেশনাল ফুটবলার হয়ে পরিবারের হাল ধরবেন। ১৪ বছর বয়সে জিয়েশের ফুটবলে জীবনে আসে প্রথম সুযোগ। এসসি হেরেনভীনে ক্লাবের যুব দলে খেলা শুরু করেন তিনি। তার ফুটবল প্রতিভা আভিভূত করেছিল সবাইকে।
তবে সকল সমস্যা কাটিয়ে তিনি প্রথম মরক্কান হিসেবে নেদারল্যান্ডসে খেলা শুরু করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে হাকিম জিয়েশ এসসি হেরেনভীনের মূল দলে সুযোগ পান। এরপর এসসি হেরেনভীন থেকে ২০১৫ সালে আয়াক্স এ যোগ দেন জিয়েশ। যেখান থেকেই তিনি সকলের চোখে চলে আসেন। ২০১৫ সালে তিনি মরক্কোর হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৫ সালে আইভেরি কোস্টের বিপক্ষে মরক্কোর হয়ে অভিষেক হয় জিয়েশের। ২০১৮ বিশ্বকাপে দেশটির হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। তবে হঠাৎই মরক্কোর সাবেক কোচ ভাহিদ হালিলহডজিক এর সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা করেন জিয়েশ। যার ফলে তার খেলা হয়নি আফ্রিকান ন্যাশনস কাপ। তবে বিশ্বকাপের ঠিক ১০০দিন আগে হঠাৎ বোর্ড হালিলহডজিক বরখাস্ত করে, দায়িত্বে আনেন ওয়ালিদ রেগ্রাগুইকে। তার অনুরোধেই অবসর ভেঙে আবারও মরক্কোর জার্সি গায়ে জড়ান।
গোল বা এসিস্ট বেশি করতে না পারলেও সঠিক ভাবে দলে নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তিনি। বিশ্ব কাপের ফেভারিট বেলজিয়াম, কানাডা,স্পেন ও পর্তুগালকে একে একে হারিয়ে মরক্কোর বিজয়রথ থামল সেমিফাইনালে এসে। বয়স্ক মানুষেরাও অনেকসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, কিন্তু দশ বছর বয়সী সেই ছেলেটির নেওয়া সিদ্ধান্তে আজ অসাধারণ প্রতিভার সাক্ষী সারা বিশ্ব। তার কঠোর পরিশ্রমে তিনি তার পরিবারকে তুলে নিয়ে গেছেন সুখের রাজপ্রাসাদে। তিনি বিশ্বকাপে খেলে ফেলেছেন নিজ দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ। তাকে দেশের রত্ন হিসেবে তাকে সম্মানিত করা হয়েছে।
Discussion about this post