ঠিক আমাদের মতোই গাছেদেরও যে নিজস্ব প্রাকৃতিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা আছে, তা হয়ত অনেকের কাছেই অজানা। উদ্ভিদের গায়ে মিথোজীবি হিসাবে বসবাসকারী ছত্রাকের মাইসিলিয়ার মাধ্যমে গাছেরা একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে। শুধু তাই নয়! জানেন কি গাছেদের মধ্যে কিছু হ্যাকারও উপস্থিত রয়েছে? কী? জানেন না তো! তাহলে শুনুন! উদ্ভিদ জগতে এমন কিছু সদস্য রয়েছে, যারা অন্যান্য গাছের খাবারে অন্যায়ভাবে ভাগ বসায়। নিজের শরীর থেকে বিষাক্ত কোনও পদার্থ নির্গত করে তাদের বৃদ্ধি ব্যাহত করতেও দ্বিধা করে না। তাদেরকে বলা হয় ‘হ্যাকার উদ্ভিদ’!
সাধারণতঃ হ্যাকার গোষ্ঠীর গাছেদের ক্লোরোফিল থাকে না। ফলে সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে নিজেদের খাবারও তৈরি করতে পারে না তারা। তাই অন্যের খাবারের ওপরে ভরসা করেই তাদের বেঁচে থাকা। আবার এক ধরনের হ্যাকার গাছ রয়েছে যারা নিজেদের ক্লোরোফিল থাকা সত্ত্বেও, আশপাশের অন্যান্য গাছ থেকে ক্লোরোফিল চুরি করে নিয়ে আসে। এছাড়াও এমন কিছু গাছ আছে, যাদের কাজকর্ম আমাদের অবাক করে দেয়! খাদ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিবেশী গাছের সঙ্গে রীতিমত রাসায়নিক যুদ্ধ করে তারা। এমনকি মাইসিলিয়ার সাহায্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে দেয় তারা। ফলে তাদের পাশে থাকা গাছটির বেঁচে থাকাই কষ্টকর হয়ে ওঠে। রাসায়নিকের মাধ্যমে অন্য গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করার এই প্রক্রিয়াটি ‘অ্যালিলোপ্যাথি’ নামে পরিচিত।
সিনসিনাটি ম্যাগাজিনের ‘দ্য সিক্রেট লাইফ অব প্ল্যান্টস’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, কিছু কিছু হ্যাকার নাকি তার আশ্রয়দাতা গাছকে মৃত্যুর হুমকিও দেয়। ওহিওর সিনসিনাটির জ্যাভিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাথরিন মরিস নামে এক অধ্যাপিকা, সোনালি রঙের গাঁদাফুলের(ম্যারিগোল্ড) গাছ নিয়ে একটি পরীক্ষা করেন। তিনি পাত্রের মধ্যে মাইকোরাইজাল ছত্রাক সমেত গাঁদার গাছটি রাখেন। পাত্রটিতে আবার অনেক ছিদ্রযুক্ত সিলিন্ডারও রাখেন। যার মধ্য দিয়ে শিকড় না বের হতে পারলেও মাইসেলিয়া ভিতরে ঢুকতে পারে। এরপর তিনি ম্যারিগোল্ডের দ্বারা যে বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয়, তার পরিমাণ মেপে দেখেন। দেখা যায় যেসব পাত্রে মাইকোরাইজাল ছত্রাকের নেটওয়ার্ক ছিল, সেখানে সেই বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি। এই পরীক্ষা থেকেই তিনি সিদ্ধান্তে আসেন যে মাইসেলিয়া বিষাক্ত পদার্থ পরিবহন করে। তিনি আরও বলেন, এই বিষাক্ত রাসায়নিকটি প্রতিবেশী গাছেদের বৃদ্ধিও আটকে দেয়।
কাজেই দেখা যাচ্ছে শুধু প্রাণী জগতেই নয়, উদ্ভিদ জগতেও হ্যাকারের সমান উপস্থিতি। আসলে আমাদের প্রকৃতিতে এমন অদ্ভুত অনেক কিছুই রয়েছে, যার খোঁজ হয়ত আমরা আজও পাই না। বিপুলা পৃথিবীর কতটুকুই বা আমরা জানি!
Discussion about this post