ঠেলাগাড়ি কিংবা স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে একঝাঁক মানুষ। হাতে শালপাতার বাটি আর তার মধ্যে বসে রয়েছে টক জলে ভরা মুখরোচক ফুচকা। গ্রাম হোক কি মফঃস্বল কিংবা শহর, এই দৃশ্য চোখে পড়ে বাংলার সর্বত্র। কিন্তু খোঁজ নেওয়া হয়নি কোনোদিন দোকানের পেছনে থাকা ওই অন্ধকারে দাঁড়ানো মানুষটার কথা। রাত দিন এক করে যিনি তৈরী করে চলেছেন রাশিকৃত ফুচকা। আর তা নিয়ে বেরিয়েও পড়ছেন রোজ একটু রোজগারের তাগিদে। আজ তেমনই একজনের সাথে পরিচয় করাতে চলেছি আপনাদের। যিনি শিক্ষাগত যোগ্যতায় গ্র্যাজুয়েট হলেও পেশায় এক সাধারণ ফুচকা বিক্রেতা। ইতিমধ্যেই যিনি নেটদুনিয়ার প্রত্যেকর কাছে এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন।
ভাড়াবাড়িতে থাকা পলতার রাজেশ দেবনাথের সংসার বলতে বাবা মা আর ভাই। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। আর পাঁচটা গ্র্যাজুয়েট ছেলের মতোই রাজেশও স্বপ্ন দেখেন কোনো দফতরের চাকরির। আর তার জন্য জোরকদমে চলছে প্রস্তুতিও। কিন্তু পরিবারের অভাব মেটাতে হাসিমুখে আজ তিনি ফুচকার পসরা নিয়ে নেমেছেন রাস্তায়। এমনকি লকডাউনের জেরে ব্যবসার মন্দা কাটাতে ফুচকার হোম ডেলিভারিও শুরু করেছেন। ফোনে অর্ডার পেলেই বেরিয়ে পড়ছেন ফুচকার প্যাকেট হাতে। গোটা পলতা ও ব্যারাকপুর জুড়ে ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়ছে তাঁর এই হোম ডেলিভারির ফুচকা। সকাল জুড়ে টিউশনি পড়ানো আর সন্ধ্যে থেকে ফুচকার ব্যবসা। লোকলজ্জা এড়িয়ে ফুচকা বিক্রেতা বাবার পাশে এক যোগ্য সন্তানের মতো দাঁড়িয়েছেন তিনি। না, শুধুই নিজের পরিবার নয় গত বছর লকডাউনে বহু পরিবারের প্রয়োজনে ছোটাছুটিও করেছিলেন এই রাজেশ। এমনকি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন তিনি। গর্বের সাথে তিনি জানান, “কোনো কাজই ছোট নয়। লোকমুখের কথাকে আমি গুরুত্ব দিই না। হেরে যেতে নয় আমি দৌড়াতে এসেছি।”
বর্তমান প্রজন্মে ডিগ্রী মার্কসের বড়াইতে অন্ধ উচ্চশিক্ষিতরা। আর সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সবাইকে টেক্কা দিয়ে আসল শিক্ষার পরিচয় দিয়েছেন রাজেশ। চাকরির স্বপ্নের সঙ্গে রয়েছে এক ফুচকা পার্লার গড়ার ইচ্ছে। যেখানে ফুচকা প্রেমীরা অনায়সে ভেজ থেকে নন-ভেজ নানা স্বাদের ফুচকা পেয়ে যাবেন। আর্থিক অসঙ্গতির কারণে জোগাড় হচ্ছে না সেই ইচ্ছে পূরণের জন্য এক টুকরো জায়গা। চলছে প্রবল পরিশ্রম। সব বাধা পেরিয়ে নিশ্চিয়ই একদিন রাজেশ তাঁর স্বপ্ন ও ইচ্ছে দুই-ই পূরণের ক্ষমতা রাখবেন।
Discussion about this post