সে অনেক কাল আগের কথা। চিনে তখন মিং সম্রাটদের রাজত্ব। বাংলার সঙ্গে চিনের তখন বেশ সুসম্পর্কই বলা চলে। দুই দেশের মধ্যে প্রায়ই দূত মারফত উপহার আদান প্রদান চলতেই থাকত। চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে চিনের সম্রাটের পক্ষ থেকে বাংলার সুলতানের কাছে দুজন দূত আসেন৷ তাঁরা হলেন হু-শিএন এবং ফিন-শিএন। বাংলার তৎকালীন সুলতান গিয়াস-উদ-দীনের আমলেও বাংলা থেকে চিনে দূত পাঠানাে হয়েছিল। এরপর ১৪১৪ সালে সুলতান সৈয়দ-উদ-দীন দূতদের পাঠান চিনে তাঁর দূতদের পাঠালেন৷ সঙ্গে পাঠালেন অনেক মূল্যবান উপহার। তবে তার মধ্যে এমন এক উপহার ছিল যার কথা শুনলে অবাক হতেই হবে! বাংলা থেকে চিন রাজসভায় যাওয়া সেরা উপহারটি ছিল একটি জীবন্ত জিরাফ!
তবে এই জিরাফ ভারতে কিভাবে এসেছিল তার প্রকৃত ইতিহাস আজও অজানা। কেউ বলেন হয়তা কোনও এক কালে আফ্রিকা থেকে উপহার হিসাবে এ দেশে জিরাফ এসে থাকবে। আবার কারুর মতে বাংলার সুলতান চিনে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য নিজেই আফ্রিকা থেকে আমদানি করে এনেছিলেন। অন্য আরেক মতানুসার, মালিন্দির সুলতান বাংলার সুলতানের হাত দিয়ে চিনে এই উপহার পাঠিয়েছিলেন। তবে তাঁর কথা আজ আর জানা যায় না৷ বরং বাংলার সুলতানের উপহারের কাহিনীই চিনে প্রচলিত হয়।
চিনে কনফিউসিয়াসের অনুগামীদের মধ্যে জিরাফকে বেশ শুভ লক্ষণ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফলে এই প্রাণীটিকে পেয়ে মিং সম্রাট ইয়ং লি স্বভাবই ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। চিনে উপহারটি বেশ মূল্যবান হিসাবেও ধরা হয়েছিল। সে দেশের মন্ত্রী এবং বাসিন্দারা ভিড় করে জিরাফটিকে দেখতেও এসেছিলেন। তবে দুঃখের বিষয় এই যে বাংলার ইতিহাসে এই কাহিনীর তেমনভাবে কোনও উল্লেখ নেই। কিন্তু চিন দেশের ইতিহাসে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই এই উপহারটির বর্ণনা রয়েছে। সে দেশে রেশমের উপর আঁকা জিরাফের স্মরণীয় কিছু ছবিও পাওয়া গেছে। ছবিটি যিনি এঁকেছিলেন সেই শিল্পী প্রাণীটির প্রশংসা করে তার কিছু বিবরণও লিখেছিলেন। আজও চিনের প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটলে সেই ছবি এবং বর্ণনার উল্লেখ পাওয়া যেতে পারে।
তথ্য সূত্র : গঙ্গাহৃদি থেকে বাংলাদেশ – বিচারপতি হাবিবুর রহমান, জলে ডাঙ্গায় – সৈয়দ মুজতবা আলি।
Discussion about this post