কড়াইশুঁটি, নলেন গুড়, পিঠে পুলি আর চড়ুইভাতির আবেগ জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির শীতের আমেজে। শীতের হালকা আরামদায়ক রোদে বসে পরিবার-পরিজন, বন্ধু- বান্ধবের সঙ্গে চড়ুইভাতি বাঙালির প্রিয় শীতকালীন বৈঠক যেন। এককালে ছোটবেলার কোনও আমবাগানে বা পেয়ারা তলায় বন্ধুরা মিলে যে বনভোজ করতাম আজ বড় হয়ে সেটাই হল কোথাও হৈ হৈ করে পিকনিক করতে যাওয়া। ঘুরতে যাওয়ার প্রতি আবার বাঙালির একটি আলাদা আকর্ষণ আছে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গ যেন নিজের মধ্যেই এক খানা ভারত যার দক্ষিণে সাগর আর উত্তরে হিমালয়! এমনই বৈচিত্র্যময় পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে আমাদের অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্রাম।
ঝাড়গ্রাম শহর তথা জেলা জুড়ে নানা সুন্দর দর্শনীয় স্থান আছে। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি, কনক দুর্গা মন্দির সহ ঝাড়গ্রাম ডিয়ার পার্ক, ডুলুং নদী এবং আরও অনেক কিছুই। কিন্তু তার বাইরেও রয়েছে এই জেলার অনেকখানি অংশ জুড়ে জঙ্গল, কোথাও তা ঘন আবার কোথাও হালকা। এমনই জঙ্গল দিয়ে ঘেরা অবিখ্যাত একটি জায়গা হলো ঝাড়গ্রামের ঘাঘরা অঞ্চল। যা লোকমুখে ঘাঘরা ওয়াটারফল নামেই পরিচিত।
আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় দু’দিকে জঙ্গলের মাঝে বয়ে চলা ছোট একটা নদী। নদীর মাঝে রয়েছে অসংখ্য ছোট এবং বড় পাথর। নদীর কম মাঝারি স্রোতে পাথর গুলো ক্ষয় হয়ে নানা রকম আকার নিয়েছে। আর সেই ক্ষয় হওয়া পাথরের মাঝে দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর জল কোথাও কোথাও ছোট্ট ছোট্ট ঝর্ণার মতো ঝরে পড়ছে। একটু সন্ধ্যে হলেই ভেসে আসে নানা জীবজন্তু ও পাখির ডাক। ভেসে আদিবাসী এলাকা থেকে উনুন জ্বালানোর গন্ধ। এই হলো অরণ্যের মাঝে দিন এবং রাত্রি।
যদিও সন্ধ্যায় বিশেষ একটা লোক দেখা যায়না এখানে। তার বড় কারণ এখনও এই এলাকায় বিদ্যুৎ সব জায়গায় ঠিক করে পৌঁছয়নি। কিন্তু শীতের দিনে আসে পাশের অঞ্চল থেকে ভালোই লোকের সমাবেশ দেখা যায়। জঙ্গলের মাঝে পাখির ডাক, নদীর বয়ে যাওয়া হালকা কুলু কুলু ধ্বনি এক অদ্ভুত শান্তি যেন চারিদিক জুড়ে। এই শীতের দিনে টুক করে ঘুরে আসাই যায় ঝাড়গ্রামের ঘাঘরা ওয়াটারফল থেকে। বলা বাহুল্য আসার সময় গুগল ম্যাপের সাহায্য কিন্তু অবশ্যই নেবেন। আর চড়ুইভাতি আনন্দ করার সঙ্গে এটাও মাথায় রাখতে হবে কোনওভাবেই প্লাস্টিক ইত্যাদি ফেলে সেখানকার পরিবেশ নষ্ট না করার দায়িত্ব আমাদের। যাতে ১০০ বছর পরেও পরবর্তী প্রজন্ম ঠিক একই জায়গায় গিয়ে বলে উঠতে পারে, “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি…”
Discussion about this post