ভ্রমণপ্রিয় বাঙালিদের কাছে ঘুরতে যাওয়ার মোক্ষম সময়টাই হল শীতকাল। এখন সকলেই ব্যস্ত, অগত্যা অল্প কয়েকদিনের ছুটি হোক বা সারা সপ্তাহের ক্লান্তি দূর করার কোনো এক সুযোগ, কে মিস করতে চায় বলুন? ছোটো খাটো ট্যুরেতেই শরীর ও মন দুটোই একেবারে চাঙ্গা! তবে এখন শহুরে হাসফাঁসে পরিবেশের বাইরে বেরোতে সবারই মন আনচান করে। তাই ইদানীং ঘুরতে যাওয়ার জায়গা বাছার সময় মানুষ শান্ত নিরিবিলি জায়গার খোঁজ আগে করেন। যাকে চলতি কথায় আমরা ‘অফবিট’ বলে থাকি। এরকমই এক শান্ত নিরিবিলি জায়গা উত্তরবঙ্গের গারুচিরা। শিলিগুড়ি থেকে ১২৭ কিমি দূরে এবং আলিপুরদুয়ার থেকে ৮০ কিমি দূরে অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামটি।
তরাই ডুয়ার্স অঞ্চল সংলগ্ন এই ছোট্ট গ্রামটি প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে একপ্রকার স্বর্গরাজ্য। ভারত ও ভুটান বর্ডার সংলগ্ন এই জায়গায় পাহাড় এবং জঙ্গল দুটিই একেবারে উপভোগ করার মত। নীল ভুটান পাহাড়ের সৌন্দর্যতা উপভোগ করতে করতে অন্য পাড়ে দেখতে পাবেন শাল, সেগুনে মোড়া বান্দপানি জঙ্গল। এখানে সবথেকে আকর্ষণীয় দেখার জিনিস হল হাতির পাল চলেছে হেলেদুলে বান্দপানি জঙ্গলের দিকে। এই দৃশ্য দেখতে দেখতেই কখন যে সময় কেটে যাবে বুঝতেই পারা যায় না। নেপালের হাতিদের ডুয়ার্সে প্রবেশের প্রধান ফটক এই গারুচিরা। তাই এই গ্রামকে এলিফ্যান্ট করিডোরও বলা হয়। বন বিভাগের দলগাঁও রেঞ্জ অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বান্দাপানি জঙ্গল। সকাল সকাল গেলে বন্য জন্তু দেখার সম্ভাবনা ষোলো আনা।
উত্তরবঙ্গ মানেই রাতে বেশ ভালোই শীত। তাই আর বেরোনোর তো কথাই নেই। কিন্তু এখানে রাতে ওয়াচারটাওয়ার থেকে হাতির পাল দেখার সুযোগ একেবারেই মিস করলে চলবে না। আবার পাহাড় বেয়ে নেমে আসা সুপ্তি ও রেতি নদী পরিবেশের সৌন্দর্য্যতাটাকে আরও একগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। পাহাড়, জঙ্গল দেখা শেষ হলে নদী তো রইলোই! নদী-তীরে পড়ে থাকা নুড়িপাথরের ওপর দিয়ে হেঁটে আসাই যায় খানিকের জন্য। এখান থেকে আলিপুরদুয়ারও যেহেতু কাছেই তাই এখানে একদিন কাটিয়ে পরদিন আলিপুরদুয়ার থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।
ভাবছেন তো কীভাবে যাবেন? আর কোথায়ই বা থাকবেন? যাওয়া বেশ সহজ। শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে দলগাঁও নামতে হবে। এখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে বীরপাড়া-বান্দাপানি হয়ে পৌঁছবেন গারুচিরা। এখানে রাজ্য বনবিভাগের দুটি বাংলো রয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে এখানে গড়ে উঠেছে গারুচিরা ভিলেজ ইকো-পার্ক। পর্যটন শিল্পে জোয়ার আনার জন্যই এই ব্যবস্থা। বর্ষাকালে বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়েই ঘুরে আসতে পারেন ডুয়ার্সের এই অফবিট গারুচিরায়। উইকেন্ডের বিশ্রামের পক্ষে উপযুক্ত তো বটেই, সাথে ছবি তুলতে যারা ভালোবাসেন তাঁরাও রসদ পাবেন এখানে কথা দিলাম।
চিত্র ঋণ – মৈনাক গুহ সরকার
Discussion about this post