কখনও ভেবে দেখেছেন আপনার প্রিয় কটন শার্টটি কতটা পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন করছে? ভাবলে অবাক হতে হয় আমাদের ফ্যাশন এর জন্য ফ্যাশন শিল্পও পৃথিবীকে দূষিত করার কাজে ৫% দায়ী। তুলার মতো প্রাকৃতিক ফাইবারও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। একটি তদন্তে দেখা গেছে যে উত্তরাঞ্চলের গ্রীষ্মমন্ডলীয় সাভানা অঞ্চলে তুলা উৎপাদনের জন্য কয়েকশো হেক্টর জমি সাফ করা হয়েছে। তাই এখন আমাদের গবেষণার বিষয় হল কিছু অপ্রচলিত তন্তু যা তুলার বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে কফির বর্জ্য পদার্থ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতল এবং এছাড়াও আছে কিছু সামুদ্রিক শৈবাল, ভুট্টা, মাশরুম ইত্যাদি।
এইচ অ্যান্ড এম, গার্লফ্রেন্ড কালেকটিভ,প্যাটাগোনিয়া, আমেরিকান রিসাইকেলড ক্লোদিংয়ের মতো ব্র্যান্ডগুলি পরিবেশ বান্ধব জামা-কাপড় তৈরির ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছে। ফ্যাশন দুনিয়ায় সাধারণত দুই ধরনের তন্তু ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক ও সিন্থেটিক। সিন্থেটিক তন্তুগুলির থেকে প্রাকৃতিক তন্তুগুলি প্রাধান্য বেশি পায় তাদের পচনশীল ক্ষমতার জন্য। আবার কিছু পেট্রোক্যামিকেল তন্তু আছে যেগুলি জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে তৈরি হয়। এই জাতীয় তন্তু পচে না বরং এগুলি ধীরে ধীরে ভেঙে যায়। তারপর পেট্রোকেমিক্যাল ফাইবারগুলি মাইক্রোপ্লাস্টিককে মুক্ত করে দেয়। এই তন্তুগুলি শুধু পরিবেশের ক্ষতি করে না, খাদ্য শৃঙ্খলে ঢুকে মানুষ ও প্রাণীর স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করে থাকে। শুধু তাই না, কিছু কিছু বস্ত্র তৈরি হয় দুই বা তার বেশি ফাইবারের সংমিশ্রণে। এগুলি পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে অসুবিধা তৈরি করে কারণ দুইয়ের বেশি ফাইবার একসাথে থাকলে সেগুলিকে পুনরুদ্ধার করা সহজ হয় না।
অন্যান্য উদীয়মান প্রাকৃতিক ও দূষণমুক্ত তন্তুর মধ্যে রয়েছে পদ্ম, আনারস, কলার ফাইবার, কমলার খোসা ইত্যাদি। এগুলি দিয়েও সফলভাবে কাপড় তৈরি করা হয়েছে। এসব উপাদান ব্যবহার করা হলে ওপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলি আসবে না। এছাড়াও পানীয়ের বোতলের মতো প্লাস্টিক দিয়েও পোশাক তৈরি করা হয়েছে। এই সমস্ত উপাদান কাঁচামালের ওপর আমাদের নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে ও সঙ্গে পরিবেশকে প্লাস্টিক দূষণ থেকেও রক্ষা করবে। বড় বড় ফ্যাশন দুনিয়া, খুচরো বিক্রেতা এই ফাইবারগুলির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন বিনিয়োগে সাহায্য করলে পৃথিবীকে কিছুটা হলেও দূষণমুক্ত করা যাবে।
Discussion about this post