“ফড়িঙের ডানাতেও এ জীবন দেয় ডাক, বেঁচে থাক সব্বাই হাতে হাত রাখা থাক।”
চোখের সামনে খারাপ অবস্থা দেখেও এড়িয়ে যাওয়া সমাজের বেশিরভাগেরই স্বভাব। কিন্তু তার বাইরে গিয়েও যারা এগিয়ে আসেন তারাই তৈরি করতে পারেন ‘সংহতি’। নাহ, এটি কোনও এনজিও নয়। বলা চলে লড়াই শেখার স্কুল। ২০২০তে লকডাউনের সময় থেকে বন্ধ ছিল স্কুল কলেজগুলো। সেই সময়ই জন্ম নেয় ‘সংহতি’।
কলকাতা স্টেশনের পাশ থেকে শুরু করে টালা, সল্টলেকের ৫ ও ১২ নং ট্যাঙ্ক সহ গড়িয়াহাটে রয়েছে সংহতি। তবে আজ বলছি ‘গড়িয়াহাট সংহতি ইশকুল’ এর কথা। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই দিনের আলো দেখেছে একটি গান। সংহতির গান। এই গানের কথা এবং সুর দিয়েছেন গিলি। এ গান আসলে শ্রমজীবিদের কথা বলে। যাদের মাথার ওপরে ছাদ বা পেটের খাবার কোনোটাই ঠিকমতো জোটে না। গড়িয়াহাট ব্রিজের নিচেই বাস এমন কিছু মানুষের। যাদের নিয়েই গড়ে উঠেছে গড়িয়াহাট সংহতি ইশকুল।
এই স্কুলে শুধুপুঁথিগত শিক্ষাই নয়, দেওয়া হয় অধিকারবোধের শিক্ষাও। সংহতির এক মুখ ঋক বলেন,”এখানে শিক্ষা দেওয়া নেওয়া চলে। এখানে প্রত্যেকেই শিক্ষার্থী এবং প্রত্যেকেই শিক্ষক।” সংহতি স্কুল কোনো এন জি ও নয়। এ স্কুল শেখায় লড়াই করতে শেখায়। প্রথমে প্রায় এক থেকে দেড় বছর ওদের ক্লাস হয়েছিলো ব্রিজের নিচেই। পরে সপ্তাহে ছ’দিন ঋকের বাড়িতে ক্লাস চলে। যদিও প্রতি রবিবার ব্রিজের নিচে নেওয়া হয় ক্লাস। ওরা শিক্ষার মাধ্যমে রাজনৈতিক হোক সামাজিক, নিজের অধিকার বুঝে নিতে শেখায়। এই মানুষগুলো সংহতির হাত ধরে পেয়েছে তাদের সাংবিধানিক অধিকার। শিখেছে কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়। বেঁচে থাকতে হয় আত্মসম্মানকে সাথে নিয়ে।
গড়িয়াহাট ব্রিজের নিচে থাকা ছেলে মেয়েগুলো আজ আর ভিক্ষা করে না। তারা ভর্তি হয়েছে সরকারি স্কুলে। যা তারা কোনোদিন হয়তো কল্পনাও করতে পারেনি। তবে শুধু তাইই নয়, এখানে চলে শিল্প চর্চাও। নাচ, গান, আঁকা, কবিতার সাথে চর্চা হয় মধুবনীরও। বয়স অনুযায়ী ছেলে মেয়েদের দেওয়া হয় যৌন শিক্ষা। এছাড়াও ওদের কখনো কখনো সিনেমা বা নাটক দেখতে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবেই ওরা স্বপ্ন দেখে পৃথিবীটাকে সাজানোর। তবে মিথ্যে স্বপ্ন নয়, ওরা নিজেদের স্বপ্ন পূরণের যোগ্য হয়ে উঠুক নিজেরাই।
Discussion about this post