আজ বোধহয় গাঙ্গুবাঈ থাকলে মনীষা বা নির্ভয়াদের জন্য আমাদের মোমবাতি মিছিল করতে হত না। নারী শরীর মাত্রই যে তা পুরুষদের ভোগ্য নয় তা এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে দাঁড়িয়েও সোচ্চারে বলে গেছিলেন মাফিয়া রাণী। গুজরাটের কাথিয়াবাড়ের বাসিন্দা গাঙ্গুবাঈয়ের লড়াইটা শুরু হয়েছিল সেই ১৬ বছর বয়স থেকে। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতো যেই মেয়েটা এই সমাজ তাকে বানিয়ে ছাড়লো পতিতা।
কিন্তু তাতেই কী একটা মেয়ের জীবন শেষ করে দেওয়া যায়? এই প্রশ্নের উত্তর যে একটা বড় ‘না’, সেটা জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তেও মাথায় রেখেছিলেন গঙ্গা। তখন গঙ্গার বয়স ১৬। সদ্য বয়ঃসন্ধির হাতছানি উপেক্ষা না করতে পেরে বাবার এক কর্মচারীর প্রেমে পড়লেন গঙ্গা, দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে প্রেমিকের হাত ধরেই ছাড়লেন ঘর। আর যার হাত ধরে ঘর ছাড়লেন গঙ্গা, সেই ৫০০ টাকার বিনিময়ে গঙ্গাকে বেচে দিলেন নিষিদ্ধ পল্লীতে।
শুরু হল গঙ্গা থেকে গাঙ্গুবাঈ হয়ে ওঠার যাত্রা। গঙ্গা নিমেষে হয়ে গেল ‘নষ্ট মেয়ে’। কিন্তু তাতে ভেঙে পড়েননি তিনি। মনে মনে ঠিক করে নিলেন বেশ্যা হয়েও যদি থাকতেই হয় তবে তিনি রানির মতোই থাকবেন। এই জেদ থেকেই তিনি হয়ে উঠলেন মুম্বইয়ের ‘মাফিয়া কুইন’। যেই পুরুষরাই তাকে করল নষ্ট মেয়ে, তারাই লুটোপুটি খেতে থাকল গাঙ্গুবাঈয়ের পায়ের সামনে। জানা যায় মাফিয়া ডন করিম লালার গ্যাঙের এক সদস্য গাঙ্গুবাঈকে ধর্ষণ করে, যার বিচার চেয়ে গাঙ্গুবাঈ করিমলালার সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁকে রাখি বেঁধে ভাই বানিয়ে নেন। আর এর পরই কামতাপুর এলাকা গাঙ্গুবাঈয়ের রাজত্ব শুরু হয়। তবে শোনা যায় কোনও মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে গাঙ্গুবাঈ তাঁকে দেহ ব্যবসায় রাখতেন না।
মাফিয়া রাণী মনে করতেন, “উপদেশ দেওয়ার থেকে নিজে কিছু করে দেখানো অনেক কঠিন।” একবার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহেরু তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আপনি পরে বিয়ে করেননি কেন?” উত্তরে গাঙ্গুবাঈ বলেছিলেন, “আপনি বিয়ে করবেন আমাকে?” নিষিদ্ধ পল্লী থেকে দলে দলে মেয়েরা বেরিয়ে এসে এই প্রশ্নটা যদি সমাজের প্রতিটা পুরুষের দিকে ছুঁড়ে দেয়, উত্তর দিতে পারবে তো এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ?
তথ্য ঋণ – সঙ্ঘমিত্রা বনবিবি
Discussion about this post