অবশেষে তাঁর সম্ভ্রম কেড়ে নেওয়ার জন্য উদ্যত হলো পাকিস্তানী সেনারা। তখন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সেই অকুতোভয় মহিলার মা ও দুই ছেলে। বারবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানানো হয় পাকিস্তানি হায়েনা ও রাজাকারদের কাছে। এমনকি তাঁর পোষা বিড়াল কনুও ছিল ঘটনার নিশ্চুপ সাক্ষী। নিরূপায় হয়েই সেই অগ্নি কন্য মাকে বললেন আমার সন্তানদের নিয়ে তুমি এখান থেকে সরে যাও। সেদিন পাকিস্তানি নরপশুর দল হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরীর ওপর।
সম্ভ্রম হারানোর পর রমা চৌধুরী পাকিস্তানি দোসরদের হাত থেকে পালিয়ে পুকুরে নেমে আত্মরক্ষা করেছিলেন। হানাদাররা তাঁকে না পেয়ে গান পাউডার দিয়ে ঘরবাড়ি সহ যাবতীয় সম্পত্তি সব কিছুই পুড়িয়ে দেয়। এই সময় এলাকাবাসী কেউ কেউ তাঁর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর নিজের আত্মীয়রাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। রমা চৌধুরী তাঁর ‘একাত্তরের জননী’ বইয়ে লিখেছেন, “আমার আপন মেজো কাকা সেদিন এমন সব বিশ্রী কথা বলেছিলেন, লজ্জায় কানে আঙুল দিতে বাধ্য হই। আমি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না। দোকানে গিয়ে কিছু খাবারও সংগ্রহ করতে পারলাম না মা ও ছেলেদের মুখে দেবার জন্য।”
ঘরবাড়ি সহায় সম্বলহীন বাকি আটটি মাস তিনি দুই পুত্র সাগর, টগর আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে জলে-জঙ্গলে লুকিয়ে লুকিয়ে দিন অতিবাহিত করেন। পোড়া ভিটায় কোনও রকমভাবে পলিথিন আর খড়কুটো মাথায় আর গায়ে দিয়ে রাত কাটিয়েছেন। এই ভাবে বহু কষ্টে যুদ্ধের দিনগুলো পার করেন। ‘একাত্তরের জননী’সহ ১৮ টি গ্রন্থের লেখক, মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের শিকার নারী রমা চৌধুরী আজকের দিনে (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
Discussion about this post