স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশ আমলে তৈরি ছোট্ট রেল স্টেশন পলাশস্থলী। রুক্ষ লাল মাটির উপরে, শাল-শিমূল-সেগুন-মহুয়ায় ঘেরা ভগ্নপ্রায় স্টেশনবাড়ি। বীরভূমের ভীমগড় থেকে এবং ঝাড়খন্ড পর্যন্ত বিস্তৃত রেললাইন। অর্থাৎ, রেললাইনের কিছু অংশ বীরভূম, কিছু অংশ রয়েছে ঝাড়খন্ডের মধ্যে। পলাশস্থলী স্টেশনটি বর্তমানে ঝাড়খন্ডের অন্তর্গত। এই স্টেশনের তলায় রয়েছে কয়লার খনি। ফলে নিয়মিতভাবে চলে অবৈধ খনন। এলোমেলো, অনিয়ন্ত্রিত খননের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেললাইন সংলগ্ন মাটি। প্রায় ২০ বছর হলো, বন্ধ হয়েছে ট্রেন চলাচল।
১৯৫৩ সালে চালু হয়েছিল এই রেলপথ। রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭ কিলোমিটার। পূর্ব রেলের সাঁইথিয়া-অন্ডাল শাখার এই ভীমগড়-পলাশস্থলীর রেলপথ একসময় ছিল জনবহুল ও ব্যস্ত। দিনে দুই থেকে চারবার ট্রেন চলাচল হত। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলি থেকে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উপায় ছিল এই রেলপথ। বর্ধমান, আসানসোল, কলকাতা যাওয়ার উপায় ছিল সহজ। প্রান্তিক মানুষের দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহও ছিল সুবিধেজনক। যাত্রী পরিবহন না হলেও কিছু অংশে মালগাড়ি চলে আজও। কিন্তু বড়রা গ্রামের পরের একালায় পরিত্যক্ত খনি থেকে কয়লা তুলতে তুলতে এই রেললাইন বিপর্যস্ত। এর মধ্যে ঝাড়খন্ড সরকারও এই রেললাইন চালু করার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু, লাইনের বিপজ্জনক অবস্থার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
এই রেলপথ বহু মানুষ ব্যবসা বাণিজ্যের কাজে ব্যবহার করতেন। অনেক সময় স্টেশন না থাকলেও প্রয়োজনে গার্ডকে বলে নিজের নিজের গ্রামে ট্রেন থামিয়ে নেমে পড়তেন যাত্রীরা। কেউ করতেন পানের ব্যবসা, কেউ পড়াশোনার জন্য ছিলেন নিত্যযাত্রী, কারো ছিল অন্য কোনো কাজ। বহু আদিবাসী মহিলা ট্রেনে করে শালপাতা, কেন্দুপাতা, পিয়ালের তৈরি সামগ্রী বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করতে যেতেন নিয়মিত। কেউ বা বীরভূম-ঝাড়খন্ডের গরমে ঠাণ্ডা জলের কলসি বিক্রি করতে যেতেন। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার পর এ সমস্তই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বন্ধ হয়েছে সহজ ও কম সময়ে যোগাযোগের রাস্তাও।
নস্টালজিয়ার এই স্টেশন লালমাটির কবি সাহিত্যিকদের লেখাতেও স্থান পেয়েছে। বীরভূমের কবি সমরেশ মন্ডলের কলমে ফুটে উঠেছে পলাশস্থলীর কথা,
“ব্রিটিশ সরকারের পরিত্যক্ত স্টেশন।
শান্টিং ইয়ার্ড ধূসর হলুদের ভিতর
কালো অক্ষর ভেঙে পড়া চটার ভিতর আঁকা
রয়ে গেছে পলাশস্থলী জংশন উনিশশো…”
Discussion about this post