কখনো তিনি রত্ন-‘মানিক’-এর মতই দামি, আবার কখনো সেই মণি মানিকের তৈরি মুকুটেই সজ্জিত ‘মহারাজা’। যাঁর নাম শুনলেই সকল বাঙালি সেলাম ঠুকে গেয়ে ওঠে–’মহারাজা, তোমারে সেলাম’! হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। তিনি হলেন সিনেমার মহারাজা! আপামর বাঙালির বলা বাহুল্য, সকল সিনেমাপ্রেমীদের প্রিয় কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়। পাড়ার দোকান থেকে শুরু করে রকের আড্ডা–যেখানেই সিনেমা নিয়ে আলোচনা হোক না কেন, আজও আমাদের প্রিয় ‘মানিকদা’-কে দিয়েই শেষ হবে জানা কথা। সাড়ে ছ’ফুট লম্বা ব্যক্তিত্বের এই মানুষটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সিনেমার পরিচালনা করা থেকে বিদেশের মাটিতে অস্কার জয় করা–নানা জায়গায় পাড়ি দিলেও মনে প্রাণে ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি। তাই ভোজনপ্রেমী হবেন না,তা কী করে হয়?
পরিচালক হিসেবে সুনাম থাকলেও তিনি একাধারে ছিলেন সাহিত্যিকও। তাই কখনো তাঁর লেখনীর মাধ্যমে আবার কখনো পুরনো কোনো সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আমরা তাঁর ভোজনরসিক চিত্তের পরিচয় পাই। জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ালেও বাঙালি পদের প্রতি তাঁর ছিল অমোঘ টান। বাড়িতে একটু লুচি,আলুর দম,বেগুন ভাজা আর ডাল হলেই আর কিছু চাইতেন না তিনি। ডালের মধ্যে বিজয়া দেবীর হাতের তৈরি অড়হড় ডাল ছিল তাঁর সবচেয়ে পছন্দের। এছাড়া পছন্দের তালিকায় ছিল –রুটি, তরকা, খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজা, শীতের দিনে নলেন গুড়ের সন্দেশ, মিহিদানা, দই, জিলিপি, রাবড়ি বা হয়ত আরও কিছু।
মাছ-মাংসের প্রতিও কোনোদিন অনীহা ছিল না মানিকদার। মাছের বিভিন্ন রেসিপির মধ্যে অবশ্য ভেটকি মিউনিরে পদটি সবচেয়ে প্রিয় ছিল তাঁর। এছাড়া মাছ নিয়ে অতটা বিলাসী না হলেও পুরনো একটা সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায় অভিনেতা অনুপ ঘোষালের বাড়িতে সর্ষে বাটা আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে ইলিশ মাছের যে পদটি হত, সেটা বেশ কব্জি ডুবিয়ে খেতেন তিনি। আর মুরগির মাংস নিয়ে তাঁর মন্তব্য ছিল ”এর আবার কোনো স্বাদ আছে নাকি!” পাঁঠার মাংসও ছিল তাঁর পছন্দের।
Discussion about this post