একবিংশ শতাব্দীর কাছে কর্মব্যস্ততাই যেন জীবনের আরেক নাম। সারাদিনের ক্লান্তিকে ছাপিয়েও কাজই ছিল বাঁচার রসদ। গ্রামের এঁদো গলি থেকে শহরের বড় পিচ রাস্তা, সর্বত্রই ছুটছে মানুষ। কিন্তু বাধ সাধল এই লকডাউন। সেই কাজপাগল মানুষদের থেকে কর্মসুখটিকে কেড়ে নিল করোনা। ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ও যেন মানুষের কাছে হয়ে দাঁড়ালো একটা সান্ত্বনা পুরস্কার। চার দেওয়ালের মধ্যে আটকা পড়া আজকের এই দুনিয়াটিকে নিয়ে মানুষ যথেষ্ট অসন্তুষ্ট। ঘরবন্দী সেই একঘেঁয়ে জীবনটাকে নিয়ে তাই শুরু করেছে নানারকম এক্সপেরিমেন্ট। আর তেমনই এক অবসরের যথার্থ খোঁজ দিলেন বাঙালি বাড়ির দুই মেয়ে।
বারুইপুরের পুরনো বাজার থেকে একটুখানি এগোলে ডানহাতে পড়ে ইরিগেশন অফিস। আর তার সামনেই ‘একটু দাঁড়ান’। হ্যাঁ, দাঁড়াতে তো আপনাকে হবেই। কারণ সেখানেই যে বসেছে চা মোমো চিকেন পকোড়ার মতো সুস্বাদু স্ন্যাকসের আইটেম। শ্রেয়সী আচার্য এবং শ্বেতা চক্রবর্তী নামের দু’টি মেয়ের শখের সাজানো স্ট্রিট ফুডের দোকান এটি। নামিদামী কর্পোরেটের চাকরিকে সঙ্গী করেই লকডাউনের অবসরে কাজে মেতে উঠেছেন তাঁরা। পকেটে উঁচু মাপকাঠির ডিগ্রী থাকলেও পথের ধারে দোকান খুলতে বিন্দুমাত্র সংশয় জাগেনি তাঁদের। বরং তাঁদের বানানো খাবারে রয়েছে অদ্ভুত তৃপ্তির স্বাদ। সকালে ওয়ার্ক ফ্রম হোমে অফিসের কাজ শেষ করে রোজ বিকেল ৪টে থেকে ৯টা ভিন্ন স্বাদের আসরে সাজিয়ে ফেলছেন দোকানটি। লাল কাপড়ে ঢাকা অতি সাধারণ একটি দোকান দিন দিন এলাকাবাসীর মন জয় করে চলেছে।
সমাজ চিরকাল মানুষকে বিচার করে তার ডিগ্রী কিংবা কাজের মাত্রা দেখে। আর সেই সমাজে দাঁড়িয়ে এই দুই মেয়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কোনো কাজই ছোট নয়। এবার আপনারাই বিচার করুন শিক্ষাগত যোগ্যতা ও চাকরির নিরিখে তাঁদের দেখবেন নাকি ‘একটু দাঁড়াবেন’ দোকানের এক সাদাসিধা ব্যবসায়ী হিসেবে পরখ করবেন। চাকরির হাহাকারে যাঁরা এখনও ডিগ্রী আগলে বসে রয়েছেন তাঁদের সামনে যেন এক নতুন পথের দিশা দেখালেন এই দুই বঙ্গ তনয়া। আগামীদিনের সমাজকে আরও পরিণত করতে তাঁদের এই অবদান সত্যিই দৃষ্টান্ত।
চিত্র ঋণ – গৌতম গোস্বামী
Discussion about this post