বর্ষার শুরুতেই ফুলেফেঁপে উঠেছে উত্তরবঙ্গের একের পর এক নদী। আর সেই জল ঢুকে পড়েছে জনবসতিতে। যদিও বৃষ্টিতে এলাকা ভেসে যাওয়ার এ ছবি একেবারেই নতুন নয় জলপাইগুড়ির মানুষের কাছে। বর্ষাকাল পড়লেই এখানকার মানুষ বিপদের প্রহর গুনতে থাকেন ‘ওই বুঝি এলো বন্যা’। প্রতিবছর বর্ষায় ভেসে যায় তিস্তার দুই পাড়। বিশেষত, জলপাইগুড়ির ২৫ নম্বর ওয়ার্ড পরেশ মিত্র কলোনির এই বস্তি এলাকার সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয় বন্যার জলে। প্রাণ বাঁচাতে কোনওরকমে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন এই সমস্ত এলাকার মানুষ। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে ঘরবাড়ি। যদিও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরের অবস্থাটা একটু বেশিই ভয়াবহ। বিগত কিছু বছরের ইতিহাসে এমন দেখেনি মানুষ। জলপাইগুড়ির সুকান্তপল্লী, গুরুত্বপূর্ণ বাজার এলাকা, দিনবাজার সহ একাধিক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিস্তা নদীর জলে। জলবন্দি প্রায় হাজারেরও বেশি মানুষ। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ভোট পেরিয়ে গেলে প্রশাসন থাকে উদাসীন।
একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিলিগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও সিকিমের বিস্তীর্ণ এলাকা। মহানন্দা নদীর জল ইতিমধ্যেই বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে যা ১৯৬৮ সালের পর এই প্রথম। জোড়া পানি, ফুলেশ্বরী, বালাসন বিভিন্ন নদীর জলে নিকটবর্তী এলাকার জনজীবন ইতিমধ্যেই ব্যাহত হয়েছে। প্রায় ১০০ টিরও বেশি পরিবার জলমগ্ন অবস্থায় ঘরবন্দী। মেলেনি খাবার, পানীয় জল। অধিকাংশ বাড়িতেই হাঁটু সমান জল। ভেসে গেছে একের পর এক স্থানীয় দোকান-বাজার। এরই মাঝে বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়ে বিপদের আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ বছরের পর বছর এভাবে কেটে গেলেও জল নিকাশের জন্য কোনও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এদিকে মালদা, উত্তর দিনাজপুরেও পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে, ফুঁসছে নদী। যে কোনও মুহূর্তে ভেসে যেতে পারে এই দুই জেলাও। একেবারে হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবার আগে কিছু ব্যবস্থা নিক প্রশাসন, এটাই কাম্য।
চিত্র ঋণ – অর্যমা রায়
Discussion about this post