লাইব্রেরি বলতেই আমরা চারিদিকে আলমারিতে সাজানো ঘর কল্পনা করে নিই। তবে লাইব্রেরি মানেই যে চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি খানিকটা জায়গা নয়, সে-কথা আগেই প্রমাণ করেছে রাজ্যের পরিবহন নিগম। শহর কলকাতার বুকে আগেই ট্রাম-লাইব্রেরি চালু হয়েছে । এবার সেই সাফল্যের কথা মাথায় রেখেই আরো এক ধাপ এগিয়ে তৈরি হল লঞ্চ-লাইব্রেরি। এই পাঠাগার ভেসে বেড়াবে গঙ্গাবক্ষে। মূলতঃ কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের বাইরে বেরনোর আতঙ্ক দূর করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিদেশের ধাঁচে তৈরি হুগলি নদী বা গঙ্গায় ভাসমান লাইব্রেরিটি চালু করেছে রাজ্য পরিবহণ নিগম। ‘লাইব্রেরি অন বোট’ যা নয়া চমক হচ্ছে কলকাতায় ভূতল পরিবহণ নিগমের। শহর কলকাতায় ট্রাম নিয়ে অনেক ধরণের এক্সপেরিমেন্ট করছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পরিবহণ নিগম। ট্রাম ওর্য়াল্ড, ট্রাম লাইব্রেরি, পাটরানির পরে এবার ভাসমান লাইব্রেরি। একদিকে স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের আকর্ষণ বাড়ানো। অন্যদিকে কলকাতায় আসা পর্যটকদের জন্যও মনে রাখার মতো হতে চলেছে ভাসমান লাইব্রেরি।
লঞ্চের মতো ধীর গতির যানে চাপতে চান না অনেকেই কিন্তু সেই সময়টা যদি বই পড়ে কেটে যায়, তাহলে মন্দ কী? এই অভিনব ভাবনাকে সামনে রেখেই সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দিনে তিনবার যাতায়াত করবে এই লঞ্চ। আপাতত মিলেনিয়াম ঘাট থেকে বেলুড় পর্যন্ত ঠিক করা হয়েছে যাত্রাপথ। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে সাধারণের জন্য চালু হয়েছে এই পরিষেবা। লঞ্চের ভাড়াও যাত্রীদের সামর্থ্যের মধ্যেই। মাত্র ৩৯ টাকা। ১৮ বছরের কম বয়সি স্কুল-পড়ুয়াদের জন্য টিকিটের দাম অর্ধেক নেওয়া হবে। লঞ্চের মধ্যে থাকবে খাবার এবং ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থাও।
শিশু ও কিশোর সাহিত্যের নানা বই দিয়ে সাজানো হয়েছে বোটের অন্দরমহল।মূলত বাংলা ও ইংরাজি সাহিত্যের বই থাকছে সাজানো বোটে। এছাড়া বোট জুড়ে বাজানো হবে রবীন্দ্র সঙ্গীত, পাশাপাশি থাকছে মুখরোচক খাবারের ব্যবস্থা। চা-কফি-ফিস ফ্রাই-পকোড়া-কোল্ড ড্রিংকস-চকোলেট মিলবে বোট অন লাইব্রেরি জুড়ে। থাকছে অনলাইনে বই পড়ার ব্যবস্থা, কারণ বোট জুড়ে ওয়াই-ফাই থাকছে। মিলেনিয়াম পার্ক থেকে প্রথম বোট ছাড়বে সকাল ১১টায়। দ্বিতীয় বোট ছাড়বে দুপুর ১ঃ১৫ মিনিটে। শেষ বোট ছাড়বে বিকেল সাড়ে ৩টে সময়। পরবর্তী সময় চাহিদা অনুযায়ী বাড়ানো হবে বোটের সংখ্যা ও সময়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজবীর সিংহ জানিয়েছেন, “এটা ভীষণ প্রয়োজনীয় পরিবহণ মাধ্যম হতে চলেছে। লাইব্রেরি অন বোট ভীষণ পছন্দ হবে। এছাড়া পরিবেশ মনোরম।” পরিবহন নিগম সূত্রে খবর, সারাবছর এই বোটে গল্প পড়া, কবিতা পাঠের আসর চলতে থাকবে।
Discussion about this post