আচ্ছা একটি সাধারণ বাঙালী বাড়ির সকাল কীভাবে শুরু হয়? এই ধরুন আরাম কেদারায় বসে ঘরের কর্তা অথবা বয়স্ক একজন চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে খবরের কাগজ পড়ছে। আজ্ঞে হ্যাঁ, চোখ বন্ধ করলেই এমনই কিছু পরিচিত দৃশ্য ভেসে আসবে। আর এই বাঙালী চিরকালই সাহিত্য চর্চা করে এসেছে। সে ঘরের এক কোণে বসে বই পড়াই হোক না চায়ের কাপে তুফান তুলে পেপার পড়াই হোক। বাংলায় নবজাগরণের যুগ থেকে পড়ার প্রতি এক অসম্ভব ভালবাসা লক্ষ্য করা যায় মধ্যবিত্তদের মধ্যে। এর ফলেই বাড়তে থাকে ছাপাখানারও চাহিদা। আর আমরা অনেকেই হয় তো জানি না হাওড়ার সালকিয়াতেই ওই জেলার প্রথম ছাপাখানা স্থাপন করা হয়েছিল।
সালকিয়া ছোট শহর হলেও তার ইতিহাস কিন্তু কম নয়। তার মধ্যেই অন্যতম হলো এই ছাপাখানার ইতিহাস। মনে করা হয় ১৮২৫ সাল নাগাদ এই ছাপাখানা তৈরি হয় এখানে। এক ইংরেজ ব্যক্তি এই বিষয়ে সবথেকে বেশি উৎসাহ দেখিয়ে ছিলেন এবং মনে করা হয় তাঁর নাম বিশপ সাহেব। এসবের ফলে ক্রমেই এই অঞ্চলে বাড়তে থাকে সাহিত্যপ্রেমীদের বইয়ের চাহিদা। এমনকী এক সময় বিভিন্ন কিংবদন্তী সাহিত্যিকদের প্রায়ই আনাগোনা ছিল এই শহরে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অমিয়রতন মুখার্জী প্রায়ই আসতেন এ শহরে। রবি ঠাকুরও বক্তৃতা রাখার জন্য এসেছিলেন টাউন হলে। এই ছাপাখানা থেকেই ‘চাঁদের আলো’ পত্রিকায় বিভিন্ন খ্যাতনামা লেখক-কবিদের লেখা ছাপা হত। তাদের মধ্যে কালিদাস রায়, কুমুদরঞ্জন মল্লিক প্রমুখদের কথা না বললেই নয়। এ বাদেও ‘মদন’ নামক এক হলে দেখানো হত নির্বাক ইংরেজি সিনেমা এবং বিভিন্ন নাটক।
যদিও নবজাগরণের সময়ের সালকিয়ার সঙ্গে এখনের শহরের অনেক তফাৎ। কিন্তু ইতিহাস তো মুছে যায় না। ইতিহাস যুগের পর যুগ ধরে পিছনে রেখে যায় তার পদচিহ্ন। আর ছোট শহরের এমন সাহিত্য চর্চা দেখে মন এবং নজর দুইটিই কাড়ে। পশ্চিমবঙ্গের আনাচে কানাচে যে কতই সব ইতিহাস লুকিয়ে! সালকিয়ার এই ছাপাখানার ইতিহাস হল তারই এক প্রমাণ।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – সন্ধ্যা রায়
Discussion about this post