১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর মহিলাদের জন্য শিক্ষার সব ক্ষেত্র খুলে দেয় ভারত সরকার। ঠিক সেই বছরই অনেক বাধা বিপত্তি কাটিয়ে শিবপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন তিনি। সুযোগ পেয়েছিলেন ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ার। কিন্তু তাঁর চোখে যে সে সময় শুধু ইঞ্জিনিয়ার হওয়ারই স্বপ্ন! তাই ভর্তি হলেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়েই। এতদিন শুধুমাত্র পুরুষরাই পড়তে পারত সেটা। শিবপুরের কয়েকশো ভারতীয় এবং ইউরোপের ছাত্রের মধ্যে একমাত্র ছাত্রী হিসাবে স্থান হল তাঁর। তিনি হলেন, স্বাধীন ভারতের প্রথম মহিলা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ইলা মজুমদার।
১৯৫১ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্র্যাজুয়েট হলেন ইলা। কিন্তু শিবপুরের প্রিন্সিপাল ভেবেছিলেন ভারত তখনও মহিলা ইঞ্জিনিয়ারের কাজের জন্য উপযুক্ত হয়নি। তাই ট্রেনিংয়ের জন্য গ্লাসগো গেলেন তিনি। ট্রেনিং শেষে ভারতে ফিরে এসে দেরাদুনের একটি ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগ দেন ইলা। সেখানকার স্টাফ কোয়ার্টারে একাই থাকতেন তিনি। পরে যোগ দেন শিক্ষকতার কাজেও। প্রথমে দিল্লি পলিটেকনিক এবং পরে কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ জুট টেকনোলজিতে লেকচারার হিসাবে ছিলেন তিনি। মূলতঃ তাঁর উদ্যোগেই কলকাতার প্রথম মহিলা পলিটেকনিক কলেজ গড়ে ওঠে এবং তার প্রথম প্রিন্সিপাল ছিলেন ইলা।
এরপর ১৯৮৫ সালে ইউএনও’র তরফে থেকে তাকে বাংলাদেশের ঢাকা শহরে একটি মহিলা পলিটেকনিক কলেজ খোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুরুতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। পরে অবশ্য বাংলাদেশে যান ইলা এবং সাফল্যের সঙ্গেই কাজটি সম্পন্ন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে তিনিই ছিলেন প্রথম মহিলা যিনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রথা ভেঙেছিলেন। তিনিই প্রথম যিনি তথাকথিত মহিলা বর্জিত এক ক্ষেত্রে সাহসের সঙ্গেই পা রেখেছিলেন। পুরুষের সঙ্গে কাজ করেছিলেন সমান তালে। প্রথম তিনিই প্রযুক্তি শিক্ষায় মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দেন। এরকমই বহু ইতিহাস গড়ে তোলার কারিগর হিসাবে আমাদের আজও অনুপ্রেরণা দিয়ে যান ইলা মজুমদার।
Discussion about this post